ফেরির অভ্যন্তরে তামাকের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে উদ্যোগ নিবে বিআইডব্লিউটিসি
তামাক সেবনকারীকে একজন ভিকটিম। তামাক সব ধরণের মাদকাসক্তির প্রথম ধাপ। সরাসরি বাধা দিয়ে নয় বরং তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানের বিক্রি ও সরবরাহ বন্ধ করতে হবে।
গতকাল রবিবার ‘নৌ-পরিবহন ও পাবলিক প্লেসে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন বাস্তবায়নের গুরুত্ব ও করণীয়’- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ডেভলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ সোসাইটি-ডাস্, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-বাটা এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন- বিআইডব্লিউটিসি’র যৌথ উদ্যোগে বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান কার্যালয়ের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ডাস্-তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচির টীম লীড আমিনুল ইসলাম বকুল এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিসি’র সম্মানিত চেয়ারম্যান এস. এম. ফেরদৌস আলম,(অতিরিক্ত সচিব)। ডাস্-তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচির সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিষয়বস্তুর পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপনা প্রদান করেন ডাস্’র পলিসি এনালিস্ট আসরার হাবীব। তিনি তাঁর উপস্থাপনায় তামাকের ভয়াবহতা ও পরিবেশের উপর এর প্রভাব এবং এক্ষেত্রে করনীয় বিষয়গুলিকে গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সমাজের প্রতি আমাদের বিভিন্ন দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেই দায়বদ্দতার জায়গা থেকে নিজ নিজ জবাবদিহিতিা থাকলেই প্রতিটা কাজের অগ্রগতি হয়। আজকের কর্মসূচিতে সকল বক্তা যা বলেছেন কোন বক্তাই তামাক সেবনের উপকারিতা সম্পর্কে বলেননি, সবার বক্তব্যেই অপকারিতার কথাই উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আইন দিযে সব কিছু করা যায় না, মানবিকভাবে যদি কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা যায় তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন যে, এমডিজি’র মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, স্যানিটেশন কার্যক্রম এনজিওদের সহযোগিতায় মোটিভেট করে সামাজিক আন্দোলন এ রুপদান করতে পারছি এবং পাইওনিওর হিসেবে কাজ করছি; সেখানে এসডিজি’র মাধ্যমে আমরা তামাক বিরোধী কার্যক্রমে ডাস্ এর মতো আরো এনজিওদের সহযোগিতায় টার্গেট গ্রুপ নিয়ে রুট লেভেলে কার্যক্রম করলে ধূমপায়ীদের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। তিনি তাঁর অফিসকে ধূমপানমুক্ত অফিস হিসেবে ঘোষণা করেন এবং অফিসে নোস্মোকিং সাইনেজ লাগানোর প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন। তিনি ঘোষণা দিয়ে আরও বলেন, ‘ফেরীর অভ্যন্তরে তামাকের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে খুব দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবে বিআইডব্লিউটিসি’। এব্যাপারে তিনি তাঁর অফিসের পরিচালক-প্রশাসন-কে জেনারেল সার্কুলার জারি করার আদেশ দেন। তিনি মনে করেন যে, একটি সমাজের পরিবর্তন মানেই বাংলাদেশের পরিবর্তন।
সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, স্মার্ট অফিস এবং স¥ার্ট অফিসের লোকজনই পারবে তামাক বিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে। তামাক সেবন করে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার লোক মারা যাচ্ছে। অন্য দিকে করোনায় মারা গেছে বছরে ত্রিশ হাজারের মতো লোক। অথচ দেখা যায়, করোনা প্রতিরোধে আমরা সবাই নিজনিজ জায়গা থেকে এর প্রতিরোধে কাজ করেছি যার ফল সরুপ আমরা করোনা প্রতিরোধে সফল হতে পেরেছি। একইভাবে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার মতো আমরা যদি সামগ্রীকভাবে তামাক কোম্পানীগুলোকে প্রতিহত করতে পারি তাহলে খুব তারাতারি আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস। ফেরীকে ধূমপানমুক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন যে, ফেরীতে ইজারা দেওয়ার সময় শর্ত থাকতে পারে ফেরীর অভ্যন্তরে তামাকের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধের বিষয়টা। সবশেষে তিনি যেকোনো কাজে সফলতার জন্য মাল্টি এ্যাপ্রোচের মাধ্যমে নিজেদের প্রচেষ্টা সম্পাদন করার কথা উল্লেখ করেন।
সভার শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাটা’র ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুই জন উপসচিব যথাক্রমে নজরুল ইসলাম আজাদ ও নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ ইন্সপেক্টর মো: শফিকুর রহমান ও ইঞ্জি. মো: শাহরিয়ার হোসেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: মাসুদ শেখ, এসএ টিভির সিনিয়র রিপোর্টার সালাউদ্দিন বাবলু এবং বিআইডব্লিউটিসি ও তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।