ঢাকাশনিবার , ১০ জুন ২০২৩

বাংলাদেশে ‘টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে সার্কুলার ইকোনমি মডেল কার্যকর’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুন ১০, ২০২৩ ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ । ২৮৭ জন

বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে ‘অ্যাডপ্টিং সার্কুলার ইকোনমি ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ অর্থ্যাৎ ‘টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে সার্কুলার ইকোনমি মডেল কার্যকর’ শিরোনামে ৮ জুন ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে একটি যৌথ সেমিনারের আয়োজন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনআইডিও) এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক এসোসিয়েশন’ (বিপিজিএমইএ) । এই সেমিনারের আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যা কি না এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এই সেমিনারটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজন, যেমন– আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগ সমূহের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় এবং পরিবেশের ওপর প্লাস্টিক বর্জ্যের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে আগামীর পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। প্লাস্টিক চক্রায়ন, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সামুদ্রিক দূষণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সেমিনারটিতে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।

‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধান হিসেবে সার্কুলারিটি (চক্রায়ন)’ বিষয়ে প্রথম প্যানেলে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা এম মাশরুর রিয়াজ ছিলেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক। প্যানেল সদস্য হিসেবে ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী, বিপিজিএমইএ-এর সভাপতি শামীম আহমেদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ (প্রকৃতি, জলবায়ু ও শক্তি) আরিফ এম. ফয়সাল, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স এর ডিরেক্টর শামিমা আক্তার। ‘প্লাস্টিক সার্কুলারিটি(চক্রায়ন)’ বিষয়ে আলোচনায় ‘বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক এসোসিয়েশন’ (বিপিজিএমইএ)- এর সভাপতি জনাব শামীম আহমেদ বলেন, “ওজনে হালকা ও সাশ্রয়ী হওয়ায় প্লাস্টিক বেশ প্রয়োজনীয় এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পণ্যের মূল্য হাতের নাগালে রাখতে উৎপাদনকারীদের জন্য এটি কাঁচামাল হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্লাস্টিক কোনো সমস্যা নয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই মূল প্রতিবন্ধকতা । তাই প্লাস্টিক সার্কুলারিটি (চক্রায়ন) বৃদ্ধি এবং এতে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে একটি সার্বজনীন নীতিমালা নির্ধারণ করলে এই শিল্প লাভবান হবে।” ‘প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে নীতিমালা নির্ধারণ’ বিষয়ক দ্বিতীয় প্যানেলে ডব্লিউজিজিএলআই, আইএসডব্লিউএ সদস্য, জিআইজেড ইন্ডিয়ার বর্জ্য বিশেষজ্ঞ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ইনডিপেনডেন্ট কনসালটেন্ট কার্তিক কাপুর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ইউনিলিভারের লিগ্যাল ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি রাশেদুল কাইয়ুম, বিপিজিএমইএ-এর সভাপতি শামীম আহমেদ, ইউএনআইডিও প্রতিনিধি এবং ভারতের ইউএনআইডিও-এর হেড অব রিজনাল অফিস ডক্টর রেনে ভ্যান বার্কেল, গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার সুডোকিওন ল্যান্ডফিল সাইট ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশনের নেট-জিরো বিজনেস ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিডং কিওন প্রমুখ প্যানেল সদস্য হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিশারদ বুশরা নিশাত এই প্যানেল পরিচালনা করেন। প্যানেলের সদস্যরা প্লাস্টিক চক্রায়ন বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, যাতে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ এবং পুনর্ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয় এবং পরিবেশের ক্ষতি থেকে বিরত থাকা যায়। প্যানেল সদস্যরা প্লাস্টিককে একটি চক্রের মধ্যে রাখার বিষয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনঃচক্রায়ন নিশ্চিতকরণের মতো কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্মতি জানান, যাতে পৃথিবী ও পরিবেশ এর ওপর প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। প্যানেল সদস্যরা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পের সহজীকরণ এবং পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, এমন প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মতো প্রাসঙ্গিক এবং বাস্তবসম্মত নীতিমালা নির্ধারণের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে প্লাস্টিক শিল্প ক্রমেই বড় হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গড় প্রায় ৯ শতাংশের তুলনায় বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা হয়। এ অবদানে অনানুষ্ঠানিক খাতসমূহের ভূমিকা অন্যতম এবং আমরা সবাই যদি সামনে এগিয়ে আসি এবং প্লাসিটক বর্জ্যের আরো উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় কার্যকরভাবে বিনিয়োগ করি, তবে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তাই আমাদের আন্তঃখাত সমন্বয় করা প্রয়োজন, প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে ভালো উপায়গুলো শিখতে হবে এবং এমন একটি সক্রিয় নীতিমালা জরুরি, যা অনানুষ্ঠানিক খাতকে আনুষ্ঠানিক প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করবে এবং এ ইকোসিস্টেমকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করবে।” পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন তার বক্তব্যে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিবেশ এর সুরক্ষায় বিভিন্ন অগ্রগামী নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করেছে। এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে প্লাস্টিক দূষণকে আবর্তিত করে এবং আজকের সেমিনারে এই ইস্যুর বিভিন্ন দিক আলোচনায় উঠে এসেছে। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে- আমরা ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১’ বাস্তবায়ন করেছি, যেটি যেকোনো ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত নথিবদ্ধ উপায় বলে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়া, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আমরা সার্কুলারিটি অন্তর্ভুক্ত করেছি, যেটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটাবে এবং সবুজ-বান্ধব শিল্পায়নে অবদান রাখবে। পরিবেশকে সংরক্ষণ করেই আগামী প্রজন্মের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা অংশীদারদের নিয়ে কাজ করে চলেছি।