‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং জটিলতা জানুন, উপযুক্ত সাড়া দিন।’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ডায়াবেটিস-প্রবণ দেশ এবং বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়েও গুরুতর। নানা গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশ ভয়াবহ ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে বাড়ছে ডায়াবেটিসের রোগী।
দিন দিন বাড়ছে প্রকোপ
- বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।
- আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
- ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি ছাড়াতে পারে দেশের ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা।
- ২০৪৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা পৌঁছে যেতে পারে ২ কোটি ২৩ লাখে।
- অন্তত ৪৩ শতাংশ মানুষের কখনো ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়নি। তাই তারা জানেন না যে তাদের এই রোগ আছে কি-না।
- বেশি ঝুঁকিতে আছে তরুণরা, কারণ তাদের বেশিরভাগই এ বিষয়ে সচেতন নয়।
এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে— বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রতি ১০০ জন যুবকের মধ্যে ৭ দশমিক ৪ জনের বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই বয়সী পুরুষের আক্রান্তের হার ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর নারীদের আক্রান্তের হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
গবেষণাটি করেছে সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, বিএডিএএস এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। গত বছর দেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগের ২ হাজার ৪৬৮ জনের ওপর তারা এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
কেন ঝুঁকি বাড়ছে
গবেষণায় দেখা গেছে—
- যারা দিনে ৩০ মিনিটের বেশি হাঁটেন না এবং স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করেন না, তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।
- ৬১ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর ডায়াবেটিস থাকলেও কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।
- দেশের ৬১ দশমিকে আট শতাংশ রোগী জানেই না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কারণ তারা কোনো পরীক্ষা করেননি।
- তরুণ জনগোষ্ঠী তাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
- ফাস্টফুড ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
- গ্রামের চাইতে শহরে ডায়াবেটিস বেশি।
- কিন্তু প্রি-ডায়াবেটিস গ্রামে বেশি। অর্থাৎ গ্রামের মানুষ যদি শহরে আসেন বা পরিশ্রমহীন জীবন-যাপন করেন, তাহলেই তাদের ডায়াবেটিস হবে।
কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি
- গুরুতর অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এখনই ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
- ৪০ বছর বয়স থেকে ডায়াবেটিস চেকআপ করা উচিত।
- আর যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের ৩০ বছর থেকে চেকআপ করা প্রয়োজন।
- তাই ডায়াবেটিস থাকুক বা না থাকুক সবাইকে বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা জরুরি।
- পাশাপাশি খাবারে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে আমিষ ও শাক-সবজি জাতীয় খাবার বাড়ানো উচিত।
- এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ফাস্টফুডসহ ক্ষতিকর খাবার পরিহার, নিয়মিত হাঁটা, খেলাধুলা করা প্রয়োজন।
- কেউ যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
আশার কথা হলো, ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। তাই সর্বস্তরের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা এবং ডায়াবেটিক রোগীর সেবায় ন্যায্যমূল্যে ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে অন্যান্য সহযোগী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।