ঢাকাবুধবার , ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

মালদ্বীপে শ্রমিক প্রেরণে কোন সিন্ডিকেট থাকবে না : প্রবাসী কল্যাণ সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২০, ২০২৩ ৮:০০ পূর্বাহ্ণ । ১৭৯ জন

দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান না হলে বাংলাদেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে যেতো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিক অভিবাসনের জন্য ট্যালেন্ট পার্টনারশীপ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মালদ্বীপের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ায় সেখানে কাজের সুযোগ বাড়ার পাশাপাশি ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির বিষয়ে সেদেশের সরকারের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। মালদ্বীপে শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে কোন সিন্ডিকেট করতে দেয়া হবে না। ওমানে বাংলাদেশী শ্রমিক যাবার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রত্যাহারে সরকার কাজ করছে। ইতোমধ্যে ওমানের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে, অচিরেই ওমানে কর্মী প্রেরণের বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিদেশ থেকে আউট পাস নিয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মীর দেশে ফেরার বিষয়টি সরকার অনুসন্ধান করে দেখবে এবং এই ধরণের পরিস্থিতির জন্য কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রত্যাগত অভিবাসী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষায় জন্য ন্যাশনাল রি-ইন্টিগ্রেশন পলিসি নতুন সরকার গঠনের পর চুড়ান্ত করা হবে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য একচেঞ্জ রেটকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করা উচিৎ। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।

আজ (১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার) ঢাকার এফডিসিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এসব কথা বলেন।

প্রতিযোগিতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল) যৌথভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। প্রতিযোগিতায় ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চলতি বছর দেশে প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী প্রেরণে অবদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়াম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এদেশের প্রধান নায়ক সারা বিশ্বে কর্মরত অভিবাসী ভাই ও বোনেরা। যারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শ্রমে ঘামে উপার্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছে। তাদের প্রেরিত বৈদেশিক মূদ্রার কারণে আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। চলতি বছর আমরা সাড়ে ১২ লক্ষ কর্মীকে বিদেশে প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছি। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি তাদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে পারছি ? আমরা কি বিদেশে কর্মরত ভাই বোনদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে উপযুক্ত সম্মান প্রদান করছি। নাকি নানা অনিয়ম ও আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে আমরা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান করতে পারছি না।

হাসান আহমেদ চৌধুরী আরো বলেন, আমাদের রপ্তানীর বড় খাত তৈরি পোশাক রপ্তানী ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রভাব, শ্রমিক অসন্তোষ. দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি নানা কারণে পোশাক রপ্তানী খাত সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও ২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে এপ্রিল এই ৪ মাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানী পণ্য চামড়া ও চামড়াজাত রপ্তানী ১৭.৫৫% কমে গেছে। শ্রমিকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স রক্ষা করতে না পারা, আর্টিফিশিয়াল লেদারের গুরুত্ব বাড়াসহ চামড়া ও চামড়াজাত রপ্তানী কমে যেতে পারে। তাই অভিবাসন খাতই এখন একমাত্র ভরসা আমাদের বৈদেশিক আয় বৃদ্ধির। এ কারণে সরকার, বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি, দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করে অধিক পরিমাণে দক্ষ, অতিদক্ষ ও প্রফেশনালস প্রেরণ করতে হবে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ার পাশাপাশি মালদ্বীপের শ্রমবাজার পুণরায় চালু হওয়ার খবর আমাদের জন্য বড় সুসংবাদ। তবে মালদ্বীপের শ্রমবাজার খোলার সংবাদের সাথে সাথে কোন দালাল চক্র যাতে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত না করতে পারে তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। এবছর বাংলাদেশ ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে গত বছরের মতো বিশ্বে সপ্তম স্থানে থাকছে। তবে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে আমরা এখনো পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও মিশর থেকেও পিছিয়ে আছি। এ অবস্থার উত্তরোণে দক্ষ কর্মী প্রেরণের পাশাপাশি বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের গতিকে উৎসাহিত করতে হবে।

প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত অর্থ বৈদেশিক আয়ের মূল চালিকাশক্তি শীর্ষক উদ্বোধনী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি এর বিতার্কিকদের পরাজিত করে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক প্রসূন আশীষ, সাংবাদিক ঝুমুর বারী, সাংবাদিক আলমগীর হোসেন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী উভয়দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।