জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আজ ডিওই অডিটোরিয়াম ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদারিত্বে “স্ট্রেন্থেনিং ক্যাপাসিটি ফর মনিটরিং এনভায়রনমেন্টাল এমিশনস আন্ডার দা প্যারিস এগ্রিমেন্ট ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালার আয়োজন করে। দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটের (জিইএফ সহায়তা এবং সরকারী সহ-অর্থায়ন) প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল তিন বছর এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অসামান্য সফলতার সাথে প্রকল্পটি শেষ হয়।
আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সমাপনী কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত সচিব, জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ, জনাব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আর্নউ হ্যামিলার্স, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন এফএও প্রতিনিধি এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ।
বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তন এড়াতে,২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি একটি গ্লোবাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে যার লক্ষ্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২°সে. এর অনেক নিচে রাখা এবং ১.৫°সে. এর নিচে রাখার প্রচেষ্টা চালানো। সেই সাথে, এই চুক্তি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান এবং তাদের সক্ষমতা জোরদার করতে কাজ করে। বাংলাদেশ ২০১৬ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে। তুলনামূলক কম বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ জলবায়ু শাসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি), জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি), ডেল্টা প্ল্যান, ও মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।
প্রকল্পের অর্জন
প্রকল্পটি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করে: কৃষি, বনায়ন ও অন্যান্য ভূমি ব্যবহার, শক্তি, শিল্প প্রক্রিয়া ও পণ্য ব্যবহার এবং বর্জ্যখাতে গ্রিনহাউস গ্যাস ইনভেন্টরি, মিটিগেশন অ্যাকশন, অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকশন, ফাইন্যান্স ট্র্যাকিং ও রিপোর্টিং, কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য একটি ইন্টিগ্রেটেড ক্লাইমেট চেঞ্জ মেজারমেন্ট, রিপোর্টিং এন্ড ভেরিফিকেশন (এমআরভি) প্ল্যাটফর্ম তৈরি। এই প্ল্যাটফর্মটি একটি স্ট্রাকচার্ড আর্কাইভিং সিস্টেমের মাধ্যমে হালনাগাদ কার্যক্রম এবং নির্গমন ফ্যাক্টর তথ্য সরবরাহ করে; গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, অভিযোজন, প্রশমন এবং ফাইনান্স ডেটাবেজ আপডেট করে জাতীয় জিএইচজি ইনভেন্টরি, ন্যাশনাল কমিউনিকেশন এবং দ্বিবার্ষিক স্বচ্ছতা রিপোর্ট (বিটিআর) তৈরিতে সহায়তা করবে। এই প্ল্যাটফর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তথ্য আদান-প্রদান,বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডারদের একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। এছাড়াও, এমআরভি সিস্টেম শুধুমাত্র জলবায়ু অ্যাকশনের উপর জাতীয় অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে না, বরং পরিকল্পনা, প্রোগ্রামিং, সম্পদ বরাদ্দ এবং নীতি নির্ধারণে অবদান রাখবে।
প্রকল্পটি, বিশেষ করে জিআইএস বিশ্লেষণ, পরিসংখ্যানগত সফ্টওয়্যার অপারেশন, প্রোগ্রামিংওআইটি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রিনহাউসগ্যাসল্যাবউন্নয়নেপরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এটি গ্রিনহাউসগ্যাসনির্গমন, বাতাস ও পানিরগুণমান, ইটের ভাটা, ইনফোর্সমেন্ট, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সহ পরিবেশগত তথ্য সংকলন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ এবং শেয়ার করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য একটি এনভায়রনমেন্টাল ইনফরমেশন সিস্টেম (eis.gov.bd) প্রতিষ্ঠা করে।
এছাড়া, প্রকল্পটি প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দ্বিবার্ষিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদন (বিটিআর) প্রস্তুত ও জমা দেয়ার সুবিধার্থে বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় ইনহ্যান্সড ট্রান্সপারেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক (ইটিএফ) রোডম্যাপ তৈরি করে। এর মধ্যে রয়েছে ইটিএফ অর্জনের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত, কৌশলগত এবং অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা, কারিগরি সক্ষমতা বাড়ানো, জলবায়ু স্বচ্ছতাকে মূলধারায় আনা এবং লক্ষ্য নির্ধারণ, স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা, অভিযোজন যোগ্যতা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি করা।
যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার স্থায়ীত্ব হচ্ছে মূলধারার নিয়মিততথ্য সংগ্রহের পূর্বশর্ত, জাতীয়তথ্য শূন্যতা পূরণ, এমআরভি সিস্টেম চালু করা, স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে দীর্ঘমেয়াদী তথ্য সংগ্রহ ও শেয়ার করার জন্য প্রকল্পটি ডিওই এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) তৈরিতে সহায়তা করে। এই সমঝোতা স্মারকটি নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, তথ্য শেয়ার, সংরক্ষণ, জিএইচজি নির্গমন এবং পরিবেশগত তথ্য প্রতিবেদনে সহায়তা করবে।
প্রকল্প মতে, মানসম্পন্ন ডেটা জেনারেশন, সঠিক নির্গমন ও প্রশমন গণনা,এবং স্ট্যান্ডার্ড জিএইচজি ইনভেন্টরি প্রস্তুত ও রিপোর্টিংয়ের জন্য স্টেকহোল্ডারদের জ্ঞান এবং দক্ষতা তৈরি করা অপরিহার্য। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পটি ৩৫০ টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডারদের জিএইচজি ইনভেন্টরি, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, জিআইএস বিশ্লেষণ, ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনা এবং এমআরভি সিস্টেমের উপর প্রশিক্ষণ দেয়।
এফএও বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ইটিএফ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে, সেইসাথে এমআরভি প্ল্যাটফর্ম চালু এবং প্রস্তাবিত সিবিআইটি ফেজ-II প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে জলবায়ু স্বচ্ছতা সংক্রান্ত কাজ সম্পাদন, জাতীয় মিথেন হ্রাস কাঠামো, ফুড এন্ড এগ্রিকালচার ফর সাসটেইনেবল ট্রান্সফরমেশন ইনিশিয়েটিভ (ফাস্ট) এবং হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ইনিশিয়েটিভের পাশাপাশি এফএও’র কারিগরি সহযোগিতা প্রোগ্রাম অব্যাহত রাখবে।