এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক) ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে মোট ১২টি মামলায় ১ লক্ষ ৫ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড আরোপ ও আদায় করা হয়েছে। দুই নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এম আর সেলিম শাহনেওয়াজ দক্ষিণ মুগদা ও উত্তর মুগদা কদমতলী ও সবুজবাগ এলাকায় ৪৫টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন। আদালত এ সময় ১টি স্থাপনায় লার্ভা পাওয়ায় ১ মামলায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন অঞ্চলে এসব আদালত পরিচালনা করা হয়। তিন নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিনের আদালত লালবাগ এলাকায় ২৩টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং ১টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ১ মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
চার নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলামের আদালত আরমানিটোলা ২০টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং ২টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ২ মামলায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
পাঁচ নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সফি উল্লাহ ওয়ারীর লারমিনি স্ট্রিটে ২০টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং ৪টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ৪ মামলায় ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
নয় নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মঞ্জুরুল হক কাজলার পাড় এলাকায় ৩৫টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং ৫টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ৫ মামলায় ৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
আজকের অভিযানে সর্বমোট ১৪৩টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে। এ সময় ১৩টি বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৩ মামলায় সর্বমোট ১ লক্ষ ৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে আজ থেকে ২৫টি ওয়ার্ডে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে ৩ দিনের বিশেষ চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকাল ১০টায় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান দক্ষিণ সিটির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বলদা গার্ডেন এলাকায় ৩ দিনব্যাপী এই চিরুনি অভিযানের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, “ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন সেখান থেকে রোগীদের বাসার ঠিকানা নিয়ে পরবর্তীতে আমরা গিয়ে দেখি কোথাও এডিস মশার উৎস আছে কি না। যদি থাকে তাহলে আমরা রোগীর বাড়ির আশপাশে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করি এবং এ সময় রোগীসহ এলাকাবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে আসি। কারণ, মশা কোনো সীমানা মানে না। সেজন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদেরই সচেতন হতে হবে।”
এডিস মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. মিজানুর রহমান বলেন, “উত্তর ও দক্ষিণ দুইটি আলাদা সিটি করপোরেশন এবং তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রমও আলাদা। তবে এডিস মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন সমানভাবে কাজ করছে। আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে সব কর্মসূচি হাতে নিয়েছি সেগুলো আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানিয়ে দেবো। এজন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আমরা আমাদের এডিস মশা নিধনে চিরুনি অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং লিফলেট বিতরণ করে মানুষকে সচেতন করছি।”
দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমরা নগরবাসীকে বলতে চাই, কাজ শেষে পানি যেন এক দিনের বেশি জমিয়ে না রাখা হয়। প্রতিদিনের পানি প্রতিদিন পরিষ্কার করলে এডিস মশার লার্ভা বংশবিস্তার করতে পারে না। এ বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।”
সাধারণত প্রতি ওয়ার্ডে এডিস মশা নিধনে সকালে ৭ জন এবং বিকেলে ৬ জন মশককর্মী কাজ করে থাকেন। তবে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা ওয়ার্ডগুলোতে ১৩ জন মশককর্মী সকালে লার্ভিসাইডিং এবং ১৩ জন মশককর্মী বিকেলে এডাল্টিসাইডিং পরিচালনা করবেন।
চিরুনি অভিযানের উদ্বোধনকালে অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারওয়ার হাসান আলো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।