তীব্র গরমে নাকাল অবস্থা দেশবাসীর। দুই দিন তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গতকাল শুক্রবার তা আবার অনেকটা বেড়েছে। চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪১ ডিগ্রিতে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সামনে তা আরো বাড়তে পারে। বড় পরিসরে বৃষ্টি না হলে এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতেও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর আবারও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করে বলেছে, তাপপ্রবাহ আগামী রবিবার পর্যন্ত চলতে পারে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ গতকাল বলেন, ‘তাপমাত্রা আজ (গতকাল) বেড়েছে, আগামীকালও (আজ) বাড়বে। এরপর দুই-তিন দিন তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অর্থাৎ কখনো কিছুটা কমতে পারে, কখনো বাড়তে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে তাপপ্রবাহ মাসের বাকি দিনগুলোতেও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও পাবনা জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা এবং খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এ ছাড়া ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের বাকি অংশ, বরিশাল বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর ও সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।
আজ শনিবারও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রা হলে তখন তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।
গত বছরের ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি উঠেছিল।
এ বছর তাপমাত্রা এ পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে বজলুর রশিদ বলেন, ‘এ রকম পরিস্থিতি থাকলে এ বছরও এপ্রিলে তাপমাত্রা ৪২ বা ৪৩ ডিগ্রি ওঠাটা অস্বাভাবিক না।’
গতকাল টানা চতুর্থ দিনের মতো চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এখানেই ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে সারা দেশ মিলিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগের দিনের তুলনায় দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৭ ডিগ্রি। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনার ঈশ্বরদী, যশোর ও বাগেরহাটের মোংলাতেও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি বা এর বেশি ছিল। ঢাকাতেও গতকাল আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৬ ডিগ্রি। গতকাল এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৪ ডিগ্রি।
গতকাল সারা দেশে অঞ্চলভেদে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৬ ডিগ্রি এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র। চুয়াডাঙ্গায় স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ৪.৩ ডিগ্রি বেশি এবং ঢাকায় ৫ ডিগ্রি বেশি ছিল।
আপাতত তাপ কমছে না
এদিকে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বড় পরিসরে বৃষ্টি না হলে আপাতত তাপমাত্রা ও গরমের অনুভূতি তেমন কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘এখন যে ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে এটা স্থানীয় পর্যায়ে সাময়িকভাবে তাপমাত্রা কমায়। এই সময় বাতাস পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যায়। ফলে পশ্চিম দিকে বৃষ্টি না হলে স্বাভাবিকভাবেই গরম বাতাস প্রবাহিত হয়। তাই সারা দেশের তাপমাত্রা কমার জন্য পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বিশেষ করে রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়ার দিকে ভালো বৃষ্টি হলে তা পুরো দেশের তাপমাত্রাই কমাবে। তবে আগামী ছয়-সাত দিনের মধ্যে বড় পরিসরে কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছি না।’
চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপ, বাগেরহাটেও তীব্র তাপ
চুয়াডাঙ্গায় চার দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। অন্যদিকে বাগেরহাটের মোংলায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রিতে উঠেছে। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বাগেরহাটে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি। প্রচণ্ড গরমে বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।