ঢাকাবুধবার , ১৯ জুলাই ২০২৩
  • অন্যান্য

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশেষ কৃষি পণ্যে স্থান দখল করেছে কাঁঠাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৯, ২০২৩ ৫:৩৯ অপরাহ্ণ । ২৮৯ জন

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি আঞ্চলিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যেখানে প্রতিটি দেশ থেকে একটি বিশেষ কৃষি পণ্যের উপর জোর দেয়া হয়। এই অঞ্চলের প্রদর্শনী প্রকল্প হিসেবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান প্রায়োরিটি প্রোডাক্ট(ওসিওপি) উদ্যোগে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এই অনুষ্ঠানে কাঁঠালের প্রচারণা করছে।

অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মঙ্গোলিয়া, নাউরু, নেপাল, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, টোঙ্গা, ভানুয়াতু, এবং ভিয়েতনাম।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় জড়ো হয়েছেন, যেখানে তারা তাদের “বিশেষ কৃষি পণ্যের” টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করবেন, যার মধ্যে রয়েছে কচুর মূল থেকে শুরু করে চা, হলুদ, ভ্যানিলা, কাউন, এবং কোকোয়া।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, উচ্চমান সম্পন্ন, এবং দেশ-নির্দিষ্ট খাবারের উৎপাদন ও প্রচার দেশে এবং বিদেশে সেসকল খাবারের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। যদিও বিশ্বের অনেক দেশের খাদ্য এবং কৃষি পণ্য সেই দেশের স্থানীয় তথাপি বেশিরভাগ দেশে অন্তত একটি কৃষি পণ্য পাওয়া যায় যা সব থেকে ভিন্ন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই বছরের শুরুতে বাংলাদেশে কাঁঠালের ক্ষুদ্র চাষি ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য একটি প্রকল্প চালু করে।

বাংলাদেশের এফএও প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন বলেন, “এই আয়োজন বাংলাদেশের জাতীয় ফলসম্পর্কে প্রচার করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ। বিশ্বব্যাপী কাঁঠালের ব্যাপক ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উৎপাদনকারীদের সহায়তা করছে।”

কাঁঠাল দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রচুর পরিমাণে জন্মানো একটি ফল। ভারতের পরেই বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁঠাল উৎপাদনকারী দেশ। দেশের মোট ফল উৎপাদনের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি হয় কাঁঠালের উৎপাদন (বার্ষিক উৎপাদনের দিক থেকে আম এক নম্বর ফল)।

সারাদেশব্যাপী কাঁঠালের চাষ হয়। জাতীয় উৎপাদনের প্রায় এক চতুর্থাংশ ঢাকায় উৎপাদিত হয়। অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় কাঁঠাল উৎপাদনকারী জেলাগুলো হল গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, এবং নরসিংদী। বেশিরভাগ কাঁঠাল ব্যক্তিগত জমিতে চাষ করা হয় এবং মহিলারা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে জড়িত থাকে।

পুষ্টিকর কাঁঠাল ভিটামিন, খনিজ এবং ক্যালোরির একটি ভাল উৎস। এত পুষ্টিগুণ এবং রপ্তানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কাঁঠাল এখন পর্যন্ত খুব বেশি সাড়া জাগাতে পারেনি।

বাংলাদেশ সরকার ওসিওপি উদ্যোগের আওতায় কাঁঠাল নির্বাচন করেছে। মিশর, মালাউই, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, এবং উজবেকিস্তানের সাথে বাংলাদেশকে প্রথম পাঁচটি দৃষ্টান্তমূলক দেশের একটি দেশ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

গাজীপুরের কাঁঠাল চাষি কাজী মুহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, “কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর একটি ফল। গাছ, পাতা, ফল এবং বীজ সবই ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঁঠাল উৎপাদন করা সহজ, এবং এতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল পণ্য। কাঁঠাল বিপণনের আরও জায়গা তৈরি হলে তা আমার মতো কৃষকদের জন্য আরও লাভজনক হয়ে উঠতে পারে।”

কিভাবে ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান প্রায়োরিটি প্রোডাক্ট (ওসিওপি) উদ্যোগ সবকিছু বদলে দিবে? জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের অর্ধেকেরও বেশি ক্যালোরি আসে মাত্র নয়টি উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে, যদিও আনুমানিক ২৭৫০০ রকমের ভোজ্য উদ্ভিদ সারাবিশ্বে উৎপাদিত হয়। কম ব্যবহৃতও বৈচিত্র্যময় খাবারের প্রতি মনোনিবেশ করে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, যেমন বিভিন্ন রোগে ব্যাপকহারে ফলন কমে যাওয়া ও সুলভ মূল্যে ফসল ক্রয়ের ক্ষমতা হ্রাস মোকাবিলা করা যায়। বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক উৎপাদিত এবং গ্রহণকৃত খাদ্য বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি, ওসিওপি-এর সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা, সামগ্রিক নীতি এবং কারিগরি সক্ষমতা প্রচারের জন্য একটি প্রবেশ দ্বার উন্মোচন করে যা পরিবেশ, জীবিকা, এবং পুষ্টির জন্য উপকারী কৃষিখাদ্যের রূপান্তরেসহায়তা করে।

ওসিওপি উদ্যোগ ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ প্রদর্শনী প্রকল্প হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাও পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, মঙ্গোলিয়া, নাউরু, নেপাল, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, টোঙ্গা, ভানুয়াতু এবং ভিয়েতনাম সহ অন্যান্য দেশগুলিও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।

ওসিওপিতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রভাব
যদিও ওসিওপি উদ্যোগ শুরু হয় ২০২১ সালে। কিন্তু এটার সূচনা১৯৭৯ সালে হওয়া জাপানের ওইতা প্রিফেকচারের ‘এক গ্রাম এক পণ্য’ আন্দোলন থেকে। এটি প্রাথমিক পর্যায় থেকেই সফল প্রমাণিত হয়েএসেছেএবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর হচ্ছে সেই অঞ্চল যেখানে এই আন্দোলনের শুরুর দিক থেকে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের অনেকে এই পন্থাটি আরও পরিমার্জিত করেন এবং এই কৌশল রপ্ত করারমাধ্যমে কিভাবে বিভিন্ন দিক থেকে উপকৃত হওয়া যায় সেই বিষয়গুলোও তুলে ধরেন।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওসিওপি প্রকল্পগুলো প্রদর্শিত হয় এবং এই অঞ্চল যে এখনো এই রকম উদ্ভাবনী এবং এর অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সক্রিয় ওঅগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে তা দেখানো হয়।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ২০২২ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সমীক্ষায় এই অঞ্চলের উৎসাহ প্রদানকারীঅভিজ্ঞতাগুলো প্রকাশ করা হয় যা ওসিওপি’রগ্লোবালওয়েবসাইটেপাওয়া যাচ্ছে যাতে সকল অংশগ্রহণকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাওএ সম্পর্কে জানতে পারেন।

স্পেশাল এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস (এসএপি’স ) বা বিশেষ কৃষি পণ্য কি?
স্পেশাল এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস (এসএপি’স) বা বিশেষ কৃষি পণ্য হল ভৌগলিক অবস্থান এবং কৃষ্টিগত ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত গুণাবলী এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কৃষি পণ্য। এসকল পণ্য অব্যবহৃত সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করতে, এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি কৃষকদের জীবিকা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

বিশেষ কৃষি পণ্য বলতে সব ধরনের কৃষি পণ্য বোঝায়, যা প্রতীকী অর্থে জাতীয় বা স্থানীয় কৃষি পণ্য হিসাবে স্বীকৃত (বা স্বীকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে), কিন্তু স্থানীয় কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচী থেকে প্রধান ফসলগুলোর মত সুবিধা পায়নি (যেমন ধান, গম, ভুট্টা, সয়াবিন, এবং আলু)। স্থানীয়, আঞ্চলিক, বৈশ্বিক বাজার, এবং বাণিজ্যে একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কৃষি পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।