গত এক সপ্তাহ সুনামগঞ্জের ছাতকে ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত ছিল। এখনও নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতঘর ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি রয়ে গেছে। বন্যায় এ অঞ্চলের অনেক কাঁচা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এসব এলাকায় বসবাসকারীরা। উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক ও সেতু-কার্লভার্টের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব রাস্তায় বন্যার পানি কমে যাওয়াতে ক্ষত-বিক্ষতের চিত্র এখন ফুটে উঠছে।
গ্রামীণ অনেক সড়ক ভেঙে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে ছাতক-আমবাড়িবাজার ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত পরিবারের জন্য ছাতক পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে সরকারিভাবে ১৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাতকে সুরমা সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় সড়কের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ লাল পতাকা টানিয়ে রেখেছে। একই সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জরুরি মেরামত কাজও চলছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় মতে, বন্যায় উপজেলার কৈতক-সিরাজগঞ্জ সড়ক, কালিপুর হায়দরপুর সাতগাঁও সড়ক, মঈনপুর-সিরাজগঞ্জ, জালালপুর-দোলারবাজার ভায়া রসুলগঞ্জ সড়ক, জাউয়া লক্ষমসোম-জিয়াপুর-ভাতগাঁও ভমভমী বাজার সড়ক, ধারণ-আমেরতল বাজার সড়ক, নোয়ারাই ইউনিয়নের মৌলা-চৌমহনী বাজার সড়ক, ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া জাউয়াবাজার সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নের তাজপুর-জামুড়াইল ভায়া নুরুল্লাপুর সড়ক, কালারুকা-রামপুর সড়ক, ফকিরটিলা-হাদা, নোয়ারাই-নরসিংপুরবাজার সড়ক, জোড়াপানি-চৌমোহনী বাজার সড়ক, গোবিন্দগঞ্জ-লাকেশ্বর, বড়কাপন- শ্রীরিপুরবাজার সড়কসহ উপজেলার আরও কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নোয়ারাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা, উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, সিংচাপইড় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ শাহেল, জাউয়া বাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক, কালারুকা ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ আলম, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ ও ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল জানিয়েছেন, বন্যায় তাদের ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, সবজি বাগান, চাষকৃত ঘাসের চারা, গো-খাদ্যসহ কৃষি, মৎস্য গবাদিপশুর খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কে এম মাহবুব রহমান বলেন, উপজেলার মধ্যে অনেকগুলো গ্রামীণ কাঁচা সড়ক বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে অবহিত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ বলেন, বন্যায় বিভিন্ন এলাকার পাকা সড়ক ভেঙে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরণ বলেন, চলতি বন্যায় এখানের রাস্তাঘাট ও কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ছাতক-দোয়ারাবাজার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ইতোমধ্যে সরকার বন্যার্ত এলাকার লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত চাল বরাদ্দ দিয়েছে। বন্যায় এখানের রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।