সবজি হিসেবে পালং শাক বেশ জনপ্রিয়। এর সঙ্গে যদি টমেটো ও ধনে পাতা মিশিয়ে সবজি রান্না করা হয়, তখন স্বাদ যেমন বাড়বে, পুষ্টি উপাদানও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় লেবু থাকলে যোগ হবে ভিন্নমাত্রা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ চারটি সবজি ক্যান্সারের কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়। শুধু তাই নয়, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন রোগের নিরাময় হিসেবেও কাজ করে টমেটো, পালংশাক, ধনে পাতা ও লেবুর খোসা।
একদল গবেষককে নিয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএইচএম খুরশীদ আলম। তার সঙ্গে রয়েছেন ড. মো. গোলাম সাদিক, ড. মামুনুর রশীদ, ড. আজিজ আব্দুর রহমান এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী। দেশের বাজারে পাওয়া যায়—এমন খাবারের প্রায় ৬৮টি প্রকরণ সংগ্রহ করেন তারা। এর মধ্যে ৩১টি শাকসবজি, ১৭টি ফলমূল এবং ২০টি মসলা ছিল। এর মধ্যে টমেটো, পালং শাক, ধনে পাতা এবং লেবুর খোসায় ক্যান্সারপ্রতিরোধী উপাদান পাওয়া গেছে। গবেষণাটি ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ক্যান্সার রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
এ ব্যাপারে ড. খুরশীদ আলম বলেন, ‘খাবারের এ উপাদানগুলো শরীরে দুটি মাত্রায় বাড়তি সুরক্ষা দেয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। পুষ্টি উপাদানগুলো একদিকে দেহের ইমিওনিটি বুস্ট আপ করে, আবার সুস্থ কোষকেও ক্যান্সার প্রতিরোধী করে তোলে। সুস্থ কোষগুলো আশপাশের ক্যান্সার কোষকে নিধন করতেও সক্ষম হয়। এ খাবারগুলো সহজলভ্য এবং এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। সত্যি বলতে এগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অবচেতনভাবে আমরা এগুলো গ্রহণ করছি। আমরা যদি জানতে পারি, কোনগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক, তাহলে সেই অনুযায়ী খাদ্যভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্যান্সার গোটা বিশ্বে অন্যতম মরণব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে এর ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে যেসব খাবার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, সেগুলোর শনাক্ত করা ও সঠিক ব্যবহার আক্রান্তের হারকে অনেকাংশেই কমিয়ে আনতে পারে।’
তবে অধ্যাপক ড. খুরশীদ আলম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্যান্সারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বায়োমার্কার অথবা ক্যান্সার ইনিশিয়েটিং সেল (সিআইসি) নির্ণয় করার মতো কোনো যন্ত্র এখনো আবিষ্কার হয়নি। এজন্য ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ২০ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ রোগী নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ মারা যায়।’