ঢাকামঙ্গলবার , ৯ জুলাই ২০২৪
  • অন্যান্য

খেলাপি ঋণ কমাতে ‘এক্সিট সুবিধা’ দিয়ে নীতিমালা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ৯, ২০২৪ ১:০৪ অপরাহ্ণ । ১০৩ জন

ঋণখেলাপিসহ ব্যবসায় মন্দার কবলে পড়ে ঋণজালে জড়িয়ে পড়া ব্যবসায়ীদের ছাড় দিয়ে ঋণ থেকে প্রস্থান সংক্রান্ত নীতিমালা বা এক্সিট পলিসি প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেখানে ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে এ সুবিধা নেয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন ব্যবসায় মন্দার কবলে পড়া উদ্যোক্তারা। এতে রাখা হয়েছে এক বা একাধিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ। তবে এ প্রক্রিয়া দুবছরের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) এ নীতিমালাটি জারি করেছে।

এতে বলা হয়, ঋণগ্রহীতার ব্যবসা, শিল্প বা প্রকল্প কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়; অথবা লোকসানে পরিচালিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংক ঋণের কিস্তি আদায়ে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে ঋণখেলাপি বা ক্লাসিফাইড হয়ে যায়, যা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির পর্যায়ে পড়ে না। গ্রাহকের এমন আর্থিক অবস্থার কারণে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা না থাকা এমন ঋণ এক্সিটের আওতায় আদায় বা সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

এক্সিটের আওতায় ঋণ আদায় বা সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যাংকগুলো এক্সিটের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি বা মানদণ্ড অনুসরণ করছে। তাই একই ধরনের সুবিধা দিতে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রয়োজন। এ অবস্থা বিবেচনায় ঋণ আদায়ের মাধ্যমে ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ অব্যাহত রাখতে এবং ব্যাংকিং খাতে ক্লাসিফাইড ঋণ কমাতে একটি নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে বলা হয়, এক্সিট সুবিধার ক্ষেত্রে এটি ন্যূনতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকগুলো এক্সিট সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হবে। তবে ব্যাংক তাদের নীতিমালায় নমনীয় কোনো শর্ত যুক্ত করতে পারবে না।

ভবিষ্যতে আদায়ের সম্ভাবনা কম — এমন খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অথবা নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে প্রকল্প বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ঋণগ্রহীতা তার প্রকল্প বা ব্যবসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত ঋণের এক্সিট সুবিধা নিতে পারবে। ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদে পরিশোধপূর্বক এক্সিট সুবিধা নেয়ার আবেদন করতে হবে। আর আবেদন প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংক তা নিষ্পত্তি করবে।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক্সিট সুবিধা অনুমোদন করে নিতে হবে। তবে, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের এক্সিট সুবিধা দেয়ার ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পাবে। এ সুবিধার আওতায় মওকুফযোগ্য সুদ পৃথক ব্লকড্ হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে এবং সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয়ের পর ব্লকড্ হিসাবে রক্ষিত সুদ চূড়ান্ত মওকুফ হিসেবে গণ্য হবে।

এক্সিট সুবিধার আওতায় এক বা একাধিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। একাধিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিশোধসূচি প্রণয়ন করতে হবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সাধারণভাবে দুবছরের বেশি হবে না। তবে, পরিচালনা পর্ষদ যুক্তিসংগত কারণ বিবেচনায় সর্বোচ্চ আরও এক বছর সময় বাড়াতে পারবে।

বিশেষ নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, এক্সিট সুবিধা নেয়া ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ঋণের দায় সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত এক্সিটের আগের ঋণের শ্রেণিমান (ক্লাসিফিইড) বহাল থাকবে। খেলাপি ঋণগ্রহীতা যথানিয়মে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন। নিয়মিত সিআইবিতে রিপোর্ট করতে হবে; এ সুবিধার আওতায় ঋণটি পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন হিসেবে গণ্য হবে না।

এক্সিট সুবিধা নেয়া ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ বা সমন্বয়ের পূর্ব পর্যন্ত কোনো ধরনের নতুন ঋণ সুবিধা পাবে না। এ সুবিধার আওতায় অবলোপন করা ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

ঋণের বিপরীতে যথানিয়মে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে এবং ঋণ সমন্বয়ের পূর্বে ঋণের বিপরীতে গ্রহণ করা জামানত অবমুক্ত করা যাবে না। তবে ব্যাংক, গ্রাহক ও ক্রেতা আগ্রহী হলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আলোচ্য ঋণের বিপরীতে বন্ধক দেয়া সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ঋণ সমন্বয় করা যাবে। এক্সিট সুবিধা পাওয়ার পর গ্রাহক পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণ আদায়ে ব্যাংক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ইসলামি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক এ নীতিমালা অনুসরণ করে খেলাপিদের সুবিধা দিতে পারবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।