ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে চাকরি ছেড়েছেন স্বেচ্ছায়। কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরও করেছেন নিজের প্রয়োজনে। অথচ পটপরিবর্তনের পর অভিযোগ তুললেন চাকরিচ্যুতি এবং অবৈধভাবে শেয়ার হস্তান্তর করতে বাধ্য করার। এমনসব অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বীমা কোম্পানিটির সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডারদের একাংশ।
গতকাল শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। তবে ডেল্টা লাইফের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির যেসব অভিযোগ তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক ডেল্টা লাইফের সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডাররা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ডেল্টা লাইফের সাবেক কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা লাইফের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও প্রাক্তন উদ্যোক্তা পরিচালক ড. সাদিকুর আর মালিক, সাবেক মুখ্য নির্বাহী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, কোম্পানির সাবেক ডিএমডি মঞ্জুরে মওলা, হাফিজুর রহমান খান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ৯টি বিষয়ে অভিযোগ করে ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদের অপসারণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্ম একনাবিনের বিশেষ নিরীক্ষায় উঠে আসা ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার দুর্নীতি। দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তাধীন ৬৩৮ কোটি টাকার দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ।
বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাফিজ আহমেদ মজুমদার এবং সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমানের অবৈধ প্রভাবে মঞ্জুরুর রহমানের ছেলে জিয়াদ রহমান, স্ত্রী সুরাইয়া রহমান, মেয়ে আনিকা রহমান, মেয়ে সাইকা রহমান ও মেয়ে আদিবা রহমানকে আইন বহির্ভূতভাবে ভূয়া উদ্যোক্তা পরিচালক দিখায়ে কোম্পানিতে সীমাহীন দুর্নীতি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কোম্পানির দুর্নীতি উদঘাটনের জন্য সরকার পরিচালিত অডিট রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করেছেন এমন শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীকে বিদ্বেষমূলকভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে এবং অনেককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
এ ছাড়াও মঞ্জুরুর রহমান ডেলটা লাইফের হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছেন, যা বিভিন্ন অডিট রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে এবং পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছে। এই দুর্নীতির দোসর ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
তবে সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন উত্থাপন করলে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক ডেল্টা লাইফের সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডাররা।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- চার্টার্ড একাউন্টেন্টস ফার্ম একনাবিনকে ডেল্টা লাইফে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের সময় এবং সে সময় কোম্পানিটিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া ছিল। বিশেষ নিরীক্ষার পর একনাবিন দু’টি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দাখিল করে এবং প্রথম প্রতিবেদনে তারা ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে। তবে সে বিষয়ে কোন বিস্তারিত তথ্য উস্থাপন করেনি প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএ’তে সুরাহা হয় এবং একনাবিন তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দু’টি প্রত্যাহার করে নেয়। প্রত্যাহারকৃত এসব অভিযোগের বিষয়ে আপনারা নতুন করে কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ উত্থাপন করছেন- এমন প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকরা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকদের কাছে জানতে চাইলে মঞ্চে উপস্থিত ডেল্টা লাইফের তিনজন সাবেক কর্মকর্তা জানান তারা কেউ চাকরি থেকে বরখাস্ত হননি বরং তারা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। এমনকি কোম্পানি থেকে তাদের পাওনাদি ও সার্ভিস বেনিফিট পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়েও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি আয়োজকরা।
এসময় ডেল্টা লাইফের সাবেক মুখ্য নির্বাহী সাইফুল ইসলাম মাসুদ জানান- তিনি ১২ বছর ধরে বীমা খাতের বাইরে রয়েছেন।
ডেল্টা লাইফের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের নির্দেশনা অনুসারে এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সভাপতিত্বে এজিএম’র মাধ্যমে ডেল্টা লাইফের বর্তমান পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনায় গঠিত এই বোর্ডের বিষয়ে কিভাবে তারা অবৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন করছেন- এমন প্রশ্নের বিষয়েও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকরা।