জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বীমা শিল্প স্মার্টলি এগিয়ে যাক সেটাই আমি চাই। এ সময়ে তিনি ‘করবো বীমা গড়বো দেশ, স্মর্ট হবে বাংলাদেশ’ এই শ্লোগানকেও যথার্থ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আজ শুক্রবার (১ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ৫ম জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর সকল প্রচেষ্টাই ব্যহত করে দেন। আপনারা যদি হিসাব নেন দেখবেন, মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসন আমলে দেশকে কতটা উন্নতি করেছিলেন। আর ৭৫’র হত্যাকণ্ডের পর কী অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশের। বাংলাদেশ একদম এগুতে পারেনি। বরং পিছিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আমলে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল আজ পর্যন্ত সেটা আর করা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করি তখনই ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এবার আমরা ঘোষণা দিয়েছি ৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। তাই বীমা শিল্পের উন্নয়নে এটা যথার্থই যে, করবো বীমা গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা শিল্প এগিয়ে যাক। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক, মানুষকে সচেতন করুক -এটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু বীমা শিল্প সংস্কারে হাত দেন। সে সময়ে যেসব বীমা কোম্পানি ছিল তাদের অধিকাংশের মালিক ছিল পাকিস্তানি। বাংলাদেশের কারো কারো অংশিদারিত্ব থাকলেও তা ছিল খুব সামান্য। ফলে তা পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। ফলে এসব বীমা কোম্পানি পুনরায় চালু করা জন্য বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ জারি করেন। দেশি বিদেশী ৪৯টি বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করেন ও বীমা কোম্পানিগুলোকে চালু করে দেন।
বঙ্গবন্ধু সুরমা, রুপসা, তিস্তা, কর্ণফুলি ৪টি বীমা করপোরেশন গঠন করেন। এই ৪টি বীমা করপোরেশনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জাতীয় বীমা করপোরেশন গঠন করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি করপোরেশন অ্যাক্ট ১৯৭৩ প্রণয়ন করে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন গঠন করেন। পরবরর্তীতে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বীমা অধিদফতর ও বীমা শিল্পে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বীমা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। এসব উদ্যোগ তিনি নেন দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য । কিন্তু ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে তার উন্নয়ণের সকল কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। তখন আমরা বীমা খাতকে পুনরুজ্জীবিত করা, অর্থবহ করা ও মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। আমরা অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেই। কিন্তু আমরা ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম আমরা কিছু কাজ করে যাই, কিন্তু তারপর আর সেগুলো এগুতে পারেনি। কারণ ২০০১ থেকে ২০০৮ আসলে আমাদের জাতীয় জীবনে আরো একটি কালো অধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সময়ে হত্যা খুন, জঙ্গীবাদ, বাংলাভাই নানা বিষয়ের উত্থান ঘটে দেশ একটি অনিশ্চয়তার পদে চলে যায়। সেই সাথে সাথে অগ্নি সংযোগ লুটপাট সহ বাংলাদেশে একই সাথে ৫শ’র মত বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আওয়ামীলীগ ৩০০ সিটের মধ্যে ২৩৩টি সিটে জয়লাভ করে। আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে দেশের উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বীমা খাতকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমার ১৯৩৮ সালের বীমা আইনকে সংশোধন করে বীমা আইন ২০১০ ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ প্রণয়ন করি। আমরা স্বতন্ত্রভাবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্তণ কর্তৃপক্ষ গঠন করি। বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ ও জাতীয় বীমা নীতি ২০১৪ প্রণয়ন করি। এই ১৫ বছরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে আজকে বীমা শিল্প অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৮১টি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বীমা শিল্পকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে চাই। এজন্য আমরা একচ্যুয়ারিয়াল সায়েন্সে পড়ার জন্য বৃত্তি দেয়া শুরু করেছি। আমার চাই বীমা শিল্পে একটিা ডিসিপ্লিন ফিরে আসুক।