ঢাকাসোমবার , ২৯ জানুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

আর সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে না নিসচা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ ৩:৩৭ অপরাহ্ণ । ৯৫ জন
এখন থেকে আর সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে না নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে জনমনে নানা বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নিসচার চেয়ারম্যান ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।

তিনি বলেন, ‘নিসচা ২০১২ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে। সরকার ও দেশবাসীকে জানানো হয়েছে, কাজটি আমরা সীমিত ক্ষমতার মধ্যে শুরু করেছি। সারা দেশে আমাদের যতগুলো শাখা রয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্য এবং পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করে আমরা এ তথ্য সংগ্রহ করতাম। সেই সঙ্গে বলেও আসছি, ডাটা সংগ্রহের জন্য এটা যথেষ্ট নয়।’

সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আমরা সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছি। কিন্তু এখন অনেকে এ পরিসংখ্যান উপস্থাপান করছে। এতে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘শুরু থেকে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, কোনও বেসরকারি সংগঠন বা কোনও ব্যক্তির পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা প্রকৃত চিত্র তুলে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারের একটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল এবং লোকবল প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত উন্নতিরও দরকার আছে। এখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতা অপরিহার্য।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর তাৎক্ষণিক মামলার ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন দিতো পুলিশ। আমাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে যার বিস্তর ফারাক ছিল। পুলিশের প্রতিবেদনটি আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতাম না। ওই প্রতিবেদন তৈরি হয় শুধু মামলার ওপর ভিত্তি করে। যে দুর্ঘটনার মামলা হয় শুধু সেই দুর্ঘটনার তথ্যই রিপোর্টে থাকে। দুর্ঘটনায় আহতদের অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৩০ দিনের ভেতরে মারা গেলে সেই তথ্য সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে বিবেচিত হবে। আমাদের দেশে সেটা পুলিশ উল্লেখ করে না। এ কারণে এই ডাটাটির গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আমরা মনে করি না। তাছাড়া অনেক সংগঠন যখন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান দিতে শুরু করে এবং একেকজনের ডাটায় একেক রকম তথ্য প্রকাশ হতে থাকে, তখন থেকেই বিতর্ক শুরু।’

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া তথ্যকে যখন অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেন, তখন জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।’

নিসচার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার প্রশ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদফতরও সরকারের, সড়ক মন্ত্রণালয়ের বিআরটিএও সরকারের। তাহলে দুটি মন্ত্রণালয়ের সড়ক দুর্ঘটনার ডাটার হিসাব ভিন্ন ভিন্ন কেন? দুটি মন্ত্রণালয়ের এই পারস্পরিক বিরোধী অবস্থার কারণে দেশে সঠিকভাবে দুর্ঘটনা নিরসনের কারণ উদঘাটন করা যায়নি। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখনও আমাদের দেশে একটি বিষ ফোঁড়ার মতো হয়ে আছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিসংখ্যান দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতি বছরই বিগত বছরের রেকর্ড ভাঙছে। মৃত্যুর পাশাপাশি আহতের তালিকাও বেড়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হচ্ছে। আমরা যে কাজটি শুরু করেছিলাম সেটি সরকারকে পথ দেখাতে উদ্যোগী হবে। সরকার এ বিষয়ে কাজ শুরু করুক।’

তিনি আরও বলেন, সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল কোন জায়গা থেকে শুরু করবে এই প্রশ্নও রাখছি। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমি গত বছর থেকে ভাবছিলাম। সরকারি উচ্চমহলেও আমার কথা হয়েছে। সরকার যেহেতু বিআরটিএ’র মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে উদ্যোগী, আমি আমার সংগঠন থেকে আর এই তথ্য প্রকাশ করবো না। আমাদের সেল চালু থাকবে নিজস্ব গবেষণার জন্য। তবে আমরা চাইবো, বেসরকারিভাবে যারা দক্ষ তাদের নিয়ে সরকার একটা শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করুক। সাপোর্ট এবং আর্থিক বরাদ্দ দিলে আমরাও সরকারের সঙ্গে কাজটি করতে পারি।’