ঢাকাবুধবার , ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আলুর মূল্য স্থিতিশীল করতে পাইকারি, খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ ৫:১৩ অপরাহ্ণ । ১৭৬ জন

আলুর মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ সভা আয়োজন করা হয়।

বর্ণিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জনাব মো: আলী আকবরসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জনাব আশরাফ উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জনাব নাসরিন সুলতানা, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, এফবিসিসিআই এর তিনজন পরিচালক, ক্যাবের মহাসচিব জনাব এ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, এনএসআই এর প্রতিনিধি, ডিজিএফআই এর প্রতিনিধি, আলু সংরক্ষণকারী বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজের প্রতিনিধিবৃন্দ, আলু বিক্রয়কারী বিভিন্ন আড়তদার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

সভার শুরুতেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বর্ণিত সচেতনতামূলক সভার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ভোক্তাবৃন্দ কোন পণ্য বা সেবা ক্রয় করে প্রতারিত হলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে থাকেন। তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার তদারকি/অভিযান করা হয়ে থাকে।

মহাপরিচালক বলেন, আলু আমাদের দেশে মূলত প্রধান খাদ্য। আমরা সকলে জানি, আলু উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত কয়েক বছর ধরে আলুর মূল্য স্থিতিশীল ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় বাজারে হঠাৎ আলুর মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। আলুর মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করছিলাম। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে যেমন ডলার সংকট বা বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলা হয়ে থাকে কিন্তু আলুর মূল্য বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। সে প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে আলুর মূল্য সংক্রান্ত বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। মহাপরিচালক সভায় অভিযান থেকে প্রাপ্ত অসঙ্গতিসমূহ তুলে ধরেন।

অত:পর তিনি অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব আব্দুল জব্বার মন্ডলকে বিগত দিনগুলোতে আলুর মূল্যের উপর পরিচালিত অভিযানের বিষয়ে সভায় বলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। সহকারী পরিচালক জনাব আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অভিযান পরিচালনাকালে আলু বিক্রির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসংগতি যথা, দোকানে মূল্য তালিকা যথাযথভাবে প্রদর্শন করতে না পারা, পাকা ক্যাশমেমো প্রদান না করা, ক্রয়ের ক্যাশমেমো দেখাতে না পারা, হিমাগার থেকে রেশনিং করে কম সরবরাহ করা যাতে করে বাজার দর তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে ইত্যাদি বিষয় পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, আলু উৎপাদন হয়েছে কয়েক মাস আগে। অথচ হঠাৎ করে দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতা ব্যবসায়ীরা দেখাতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আলু দেশে উৎপাদিত পণ্য। এটি আমদানীকৃত পণ্য নয়। ফলে ডলারের দাম বৃদ্ধি বা ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের সাথে এই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সম্পর্ক নেই। তার পরও আগস্ট মাসে ২০-২৫ টাকার আলু বর্তমানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলোচনায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জনাব নাসরিন সুলতানা বলেন, আলুর যে উৎপাদনের কথা আমরা শুনি তাতে আলুর মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই। কেন মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এই মতবিনিময় সভার মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে জানা যাবে। জেলা পর্যায়ে আমরা মিটিং করছি, মনিটরিং করছি, সেখান থেকে আমরা তথ্য পাচ্ছি সবজির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাই আলুর মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া হিমাগার সমস্যার কারণে আলুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আলোচনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জনাব আশরাফ উদ্দিন বলেন, উৎপাদন হিসেবে আলু রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, আলুর মূল্য বৃদ্ধির কোন যৌক্তিক কারণ নেই। উৎপাদন আর চাহিদা অনুযায়ী আলুর সংকট হওয়ার কথা নয়। এটা নৈতিকতার অবক্ষয়। কোথাও গ্যাপ হচ্ছে যার জন্য আলুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।

আলোচনায় শ্যামবাজার আলু ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি বলেন, এ বছর দুই মাস আগেই কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে ব্যাপারীর দাম ঠিক করে দেয় এবং আমরা আলু বিক্রি করে শুধু কমিশন পাই।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক জনাব সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবছর আলুগুলো কোল্ড স্টোরেজ থেকে কিছুদিন আগে বের হয়েছে। আমাদের কোল্ড স্টোরেজে এখনো প্রায় ৬০% আলু আছে। তার মধ্যে বীজ আলু আছে সর্বোচ্চ প্রায় ১৫%। যারা বেশি পরিমানে আলু মজুদ করে রেখেছে তারাই মূলত বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে আলুর মূল্য বৃদ্ধি করেছে। যারা কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুদ করে রেখেছে তাদের ইতোমধ্যে ৩টি নোটিশ করেছি যেন তারা বিক্রয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যদি বিক্রয়ের ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা অক্টোবর মাস থেকে নিজেরাই আলু বিক্রয়ের ব্যবস্থা করব। আমি মনে করি, অসাধু ব্যবসায়ীরা আলু মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলু সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় তাদেরকে পাকা রশিদের মাধ্যমে আলু ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্য করতে হবে।