ঢাকাশনিবার , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য

ঋণের অর্থ কল্যাণ ও লাভজনক উপায়ে ব্যবহার করবে বাংলাদেশ ব্যাংক!

নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ । ৩৭ জন

আর্থিক খাত সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পসহ প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার রয়েছে পাইপলাইনে। বিশ্ববাজারে এখন ঋণের নতুন সুদের হার মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত ঋণের অর্থ দিয়ে দায় পরিশোধ করবে না বাংলাদেশ। বরং ঋণের অর্থ সর্বোচ্চ কল্যাণ ও লাভজনক উপায়ে ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

‘লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট’ বা লাইবর ছিল বৈশ্বিক সুদ হার নির্ধারণের মাপকাঠি। বিশ্বের ১০ থেকে ১৮টি ব্যাংকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কত টাকা কী পরিমাণ সুদে ধার দিতো তার ওপর নির্ধারণ করে ঠিক হতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর দেয়া লাইবর বা বৈদেশিক ঋণের সুদের হার। গত বছর সেটি পরিবর্তন হয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এখন ঋণ দিচ্ছে সিকিউর ওভার নাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফার) পদ্ধতিতে। তাতে আমেরিকান ব্যাংকগুলোতে এক রাতের জন্য এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকে কী হারে সুদ গুণছে তার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হচ্ছে রেট।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগেও মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ হারে লাইবরে ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেফার পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই মুহূর্তে সেফারের রেট দাঁড়ায় ৫.৩৩ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৫.৩১ শতাংশ। এর সাথে ন্যূনতম বেসিস পয়েন্ট যোগ করলে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণের সুদের হার দাঁড়ায় ৬.০৮ শতাংশ। বাজেট সহায়তায় সাধারণ সুদের হারে পরিশোধ করতে হলেও প্রকল্পভিত্তিক ঋণে সোফার সুদের হারের পদ্ধতিতে ঋণ চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণ যদি বাজেট সাপোর্টের জন্য নেয়া হয় তাহলে সেটা খুব একটা অসুবিধা না। আর যদি বড় বড় প্রোজেক্ট করার জন্য ঋণ করা হয়, তাহলে সেই প্রজেক্ট থেকে আয় কী হবে? লোকাল মুদ্রায় হবে না কী বৈদেশিক মুদ্রায় আয় হবে? পর ক্যাপিটা এক্সটার্নাল রেটও কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের কাছে থেকে ঋণ নিলে আমরা একটু সাবসেডাইজেডি পাই। এটাও যদি ৬.৫ শতাংশ হয়ে যায়, তাহলে এটাও তো কমার্শিয়াল রেট। যখনই আমরা একটা বৈদেশিক ঋণ নেবো, সেটা তো বৈদেশিক মুদ্রাতেই পরিশোধ করতে হবে। এটা তো আর দেশিয় ঋণ না। তার জন্য বৈদেশিক মুদ্র পাওয়ার একটা ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

এই মুহূর্তে বিদেশি দাতাসংস্থা ও পক্ষ থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার আছে পাইপলাইনে। এর মধ্যে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের ব্যাংক সংস্কারে ২.২৫ বিলিয়ন পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের ২৫ মিলিয়ন ঋণ সহায়তা থাকবে বিনিয়োগ গ্যারান্টি হিসেবে। ২৫ থেকে ৩৮ বছর থাকবে পরিশোধের সময়। এছাড়া এডিবির ১.৫ বিলিয়নের ৫০ মিলিয়ন পাওয়া যাবে সামনের বছর। আর্থিক খাত সংস্কারে ঋণ দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্রও। যেখানে সময় পাওয়া যাবে ১৯ থেকে ২৫ বছর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘যে লোনগুলো আমাদের দেয়া হয়, সেগুলো কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ বছর মেয়াদি থাকে। এই দীর্ঘমেয়াদে সোফারের রেট কী দাঁড়াবে তা নিয়ে আসলে এখনই অ্যানালাইসিস করার সময় না। যদি বলি যে আমাদের জন্য খুব ব্যয়বহুল হবে, টা নেয়া ঠিক হবে না, তাহলে এই মুহূর্তে এটা অ্যানালাইসিস করা ঠিক হবে না। কারণ এই ৩০ বা ৩৫ বছর সময়ে সোফারের রেট লাইবরের মতো এক শতাংশের নিচে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। কারণ এটা তো বাজারকে ক্যাপচার করে।’

তবে সব ঋণ নিয়ে দায় পরিশোধ করা হবে না। বরং গ্যারান্টি হিসেবে ব্যবহার হলে বৈশ্বিক বাজারে যে মূল্যে জ্বালানি কেনা হয় তার চেয়ে কম দামে জ্বালানি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। যা শিল্প ও বিনিয়োগ খাতে জ্বালানি সরবরাহ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে। উপকারভোগী হবে সাধারণ মানুষ।

হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘গ্যারান্টি ফ্যাসিলিটি দেখে, যারা আমাদের কাছে তেল বা জ্বালানি বিষয়ে যে কমোডিটিগুলো থাকে, এগুলো যারা বিক্রি করেন তারা স্পট মার্কেটের হাই রেটটা নিবেন না। সেক্ষেত্রে তারা হয়তো মাল্টিইয়ার একটা প্রাইজ ধরবেন। যেটাতে আমরা কস্ট অফ সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা লাভবান হতেক পারবো। আসলে এটা ইন্টারেস্ট রেটের কোনো বিষয় না। এটা হচ্ছে, আমি যে সাপ্লাইটা পাবো সেক্ষেত্রে হয়তো কিছু সাশ্রয় হতে পারে।’

গত দেড় বছরে প্রতি মাসে এক বিলিয়ন ডলারের চাপ ছিল রিজার্ভের ওপর। তবে এবার আন্তঃবাজার থেকে বিদেশি দায় শোধ করা হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার। তাতে রিজার্ভে ঘটেছে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি।