ঢাকাসোমবার , ২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য

কচুরিপানা অপসারণ

এক দশকের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির অপেক্ষায় ২০ গ্রামের বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২, ২০২৪ ১২:৫২ অপরাহ্ণ । ১৪ জন

যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এটি সবুজের গালিচা বিছানো পথ কিংবা মাঠ। আসলে তা নয়! এটি বরগুনার আমতলীর সুবন্ধি খাল। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কচুরিপানা জমে খালের এমন অবস্থা! তবে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কচুরিপানা অপসারণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আর এতেই এক দশকের ভোগান্তি থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখছেন এ খাল কেন্দ্রিক ২০ গ্রামের বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ১০ বছরেও ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণ না করায় নানামুখী সমস্যায় পড়েছেন ২০টি গ্রামের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। কচুরিপানার কারণে পানি দূষিত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। এছাড়া দূষিত পানি ব্যবহার করতে না পারায় ভোগেন পানি সংকটে। কৃষি নির্ভর এ এলাকায় কচুরিপানার কারণে খালে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উৎপাদিত ফসল পরিবহনে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরাও। তাই দ্রুত খালের কচুরিপানা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, কচুরিপানা অপসারণের জন্য ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আপাতত সুবন্ধি খালের সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর খনন কাজ চলছে। সংযোগ খালগুলোর খনন কাজ শেষে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করে সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু করা হবে। এর আগে ২০২১ সালে সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণের জন্য ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি।

হলদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমাস হাওলাদার বলেন, গত ১০-১২ বছর ধরে কি যে ভোগান্তিতে আছি বলে বোঝাতে পারবো না! খালের পানি ব্যবহার তো দূরের কথা, ছুঁয়েও দেখা যায় না। সব জায়গায় শুধু কচুরিপানা। কচুরিপানা মধ্যে প্রচুর মশা-মাছি জন্মাচ্ছে। এতে গ্রামের মানুষের রোগবালাই লেগেই আছে। খালের পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হাজার হাজার মানুষ।’

রাবেয়া বিবি নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমাদের পুকুর নেই। খালের পানির ওপরই আমারা নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু আমরা সেই পানি ব্যবহার করতে পারি না। রান্নার কাজে পানি আনতে হয় দূর থেকে। গোসল করতে হয় অন্যের বাড়ি গিয়ে। খাল যদি পরিষ্কার করে পানি ব্যবহারের উপযুক্ত করে দিত, তাহলে আমাদের ভীষণ ভালো হতো।’

অপর বাসিন্দা আব্দুর রহমান মিয়া বলেন, ‘এই খালে একসময় নৌকা চলাচল করত। জেলেরা মাছ ধরতো। এখন নৌকা চলাচল তো দূরের কথা, খালের মাছ শিকারেরও কোন সুযোগ নেই। শুধু কচুরিপানায় ভরা। কৃষি নির্ভর এ এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহনের জন্য এ খাল ব্যবহার করা হতো। কিন্তু কচুরিপানার কারণে সে সুযোগও নেই। ভোগান্তিতে কৃষকরাও। তাই আমরা চাই দ্রুত এই খালের কচুরিপানা অপসারণে করে খাল এবং খালের পানি স্থানীয়দের ব্যবহারের উপযুক্ত করে দেয়া হোক।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, ‘সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণের জন্য ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি এরইমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। আপাতত এ খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা এ খালের সঙ্গে সংযুক্ত সংযোগ খালগুলোর খনন কাজ শুরু করেছি। সংযোগ খালের খনন কাজ সম্পন্ন হলে সুবন্ধি খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত হবে। এরপর আমরা সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু করবো।’