মানস কর্তৃক মে ২০২৪-এ পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, ওটিটিতে প্রচারিত ৬০টি নাটক ও সিনেমায় নায়ক ২৮টিতে, নায়িকা ১৪ টি এবং ৮টি খলনায়কের চরিত্রে ধূমপান ও মাদক গ্রহনের দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলা ‘তুফান’ সিনেমায় নায়ক, নায়িকা ও প্রধান চরিত্রের মাধ্যমে ৬০ বারের অধিক ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এ সকল নাটক, সিনেমায় ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ করেছে। নাটক ও সিনেমার প্রধান চরিত্রে ধূমপান ও মাদককে এভাবে উপস্থাপন কিশোর-তরুণদের বিপদগ্রস্ত করছে, যা জাতির জন্য হুমকি স্বরুপ। বক্তারা ওটিটি নীতিতে জনস্বাস্থ্য, নৈতিকতা ও আইনের পরিপন্থি বিষয়গুলো নিষিদ্ধ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা, বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান বক্তারা।
আজ ১১ জুলাই ২০২৪, ধানমন্ডি’র বিলিয়া সেন্টারে ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ওটিটি নীতির প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা’ কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এ মন্তব্য করেন। কর্মশালায় উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন ‘মানস’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নীতি বিশ্লেষক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সমাপনী পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-এর টেকনিক্যাল এডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস্ সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমুখ। কর্মশালায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টপ-বাংলাদেশ এর ফোকাল পয়েন্ট ফাহমিদা ইসলাম এবং মানস এর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত। কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন মানস এর সি. প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার আবু রায়হান।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালসহ বিশ^ব্যাপী ১৪টি দেশ ‘টিকটক’ নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের দেশেও এ ধরনের মিডিয়াগুলোতে অহরহ আইন লঙ্ঘণসহ অসামাজিক, নৈতিকতা পরিপন্থী বিষয়গুলো ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, যা প্রভাবিত করছে কিশোর-তরুণদের। জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা রক্ষায় এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কোন এপস, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যদি আইন লঙ্ঘণ করে, প্রয়োজনে তাদের নিষিদ্ধ ও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, নাটক, সিনেমা ও বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত কনটেন্টগুলোতে সেলিব্রেটিদের দ্বারা অযাচিতভাবে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন আমাদের তরুণদেরকে ধূমপানসহ ক্ষতিকর মাদক সেবনে উপসাহিৎ করছে। অতীতে অনেক সিনেমা ব্যবসা সফল হয়েছে যেগুলোতে ধূমপানের দৃশ্য ছিলো না। ধূমপানের দৃশ্য কাহিনী দৃশ্যায়ন হয় না এমন ভ্রান্ত ধারনা থেকে পরিচালক, প্রযোজকদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিল্পীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন কিছু থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
মানস পরিচালিত গবেষণায় ৫টি ওটিটি চ্যানেলের ৬০টি প্রোগ্রামে পর্যবেক্ষনকৃত ১৫টি হিন্দি সিনেমায়, ৯টি ইংরেজি সিনেমায়, ১৩টি বাংলা সিনেমায় এবং ৫টি নাটকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণের চিত্র পাওয়া গেছে। তরুণদের উদ্ধুদ্ধ করতে নাটক সিনেমায় ধূমপান ও মাদকের এ ধরনের দৃশ্য সংযোজনের পিছনে তামাক ও অ্যালকোহল কোম্পানির প্রভাব রয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন।