ঢাকারবিবার , ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

ঔষধ ছাড়াই আসিডিটি কমানোর ১৪টি উপায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৬, ২০২৫ ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ । ৬২ জন

অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক এবং গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষের জন্য একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা বিশ্বে প্রায় ৮% থেকে ২৮% লোক এই সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি ডা. এস এ মল্লিক তার একটি ভিডিওতে এই সমস্যাগুলো কমানোর ১৪টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায় তুলে ধরেছেন।

১. বাঁ দিকে পাশ ফিরে ঘুমানো
গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁ পাশে ঘুমানো পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীর উপরে উঠতে বাধা দেয়। এই অবস্থায় পাকস্থলীর গঠন এমনভাবে থাকে যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অ্যাসিডকে নিচে রাখতে সহায়তা করে। যারা ঘন ঘন গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্সে ভোগেন, তারা বাঁ পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

২. মাথা উঁচু করে ঘুমানো
ঘুমানোর সময় মাথার অবস্থান একটু উঁচু রাখলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কম হয়। ঘুমানোর সময় মাথার নিচে অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করে বা বেডের মাথার পাশ উঁচু করে নিতে পারেন। এতে খাদ্যনালীতে অ্যাসিড যাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

৩. রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খাওয়া
রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। দেরি করে খাবার খেলে পেটের অ্যাসিডের কার্যক্রম বেড়ে যায় এবং এটি সহজে খাদ্যনালীতে উঠে আসতে পারে। তাই নিয়মিত রাতে তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।

৪. কাঁচা পেঁয়াজ এড়িয়ে চলা
কাঁচা পেঁয়াজ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের সিক্রেশান বাড়িয়ে তোলে এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। রান্না করা পেঁয়াজে এই সমস্যা কম হয়। তাই খাদ্য তালিকায় কাঁচা পেঁয়াজ কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

৫. কম খাবার, বারবার খাওয়া
একবারে বেশি পরিমাণ খাবার না খেয়ে অল্প পরিমাণে খাবার বারবার খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স কমাতে সাহায্য করে। এতে পাকস্থলীর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না এবং অ্যাসিড উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
পেটে অতিরিক্ত চর্বি থাকলে এটি পাকস্থলীর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে। সঠিক ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।

৭. লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট
খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে আনলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে। বেশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করে, যা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়াতে পারে।

৮. অ্যালকোহল পরিহার
অ্যালকোহল লোয়ার এসোফেজিয়াল ভাল্ভকে দুর্বল করে দেয়, ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড সহজেই খাদ্যনালীতে চলে আসে। যারা নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের জন্য এটি অ্যাসিডিটির একটি বড় কারণ। তাই অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা জরুরি।

৯. কফি এবং কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস কমানো
কফি এবং কোমল পানীয়ে থাকা ক্যাফেইন এবং গ্যাস খাদ্যনালীর ভাল্ভকে দুর্বল করে। এ কারণে অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ওঠার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কফি এবং কোমল পানীয় গ্রহণ সীমিত রাখুন।

১০. সাইট্রাস জুস পরিহার
লেবু, কমলা বা অন্য সাইট্রাস ফলের রস পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়। যদি অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে, তাহলে এই ধরনের জুস পরিহার করুন। পরিবর্তে আপেল বা পেয়ারার মতো অম্লীয় নয় এমন ফলের রস পান করুন।

১১. ভাজা এবং তৈলাক্ত খাবার এড়ানো
ভাজা এবং বেশি তেলে রান্না করা খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিড বাড়ায়। এমন খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা কমিয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন।

১২. ধূমপান ত্যাগ
ধূমপান লোয়ার এসোফেজিয়াল ভাল্ভকে দুর্বল করে দেয় এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড সহজেই খাদ্যনালীতে উঠে যায়। ধূমপান ত্যাগ করলে শুধু অ্যাসিডিটি নয়, আরও অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

১৩. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। যোগব্যায়াম, ধ্যান, এবং হাঁটার মতো শারীরিক কার্যক্রম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

১৪. পানির পরিমাণ বাড়ানো
সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস পাকস্থলীর অ্যাসিডকে পাতলা করে এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়। তবে খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত পানি পান না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এই ১৪টি অভ্যাস মেনে চললে অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই অ্যাসিডিটি মুক্ত জীবনের চাবিকাঠি।

ডা. এস এ মল্লিক এর ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=fb4BNIGSJ68