ঢাকাসোমবার , ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ক্যান্সার সনাক্তকরণে প্রযুক্তির নবযুগ: AI, জিন থেরাপি ও তরল বায়োপসির অগ্রগতি

রঞ্জন কুমার দে
ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪ ৪:৫৭ অপরাহ্ণ । ৫৩ জন

ক্যান্সার সনাক্তকরণ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উদ্ভাবন চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় দ্রুততর, সুনির্দিষ্ট এবং আগের চেয়ে কম খরচে করা সম্ভব হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), তরল বায়োপসি এবং আলো-নির্ভর জিন থেরাপির মতো প্রযুক্তি এসব পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রযুক্তি ক্যান্সার সনাক্তকরণের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ড. ইলিনা স্মিথ, একজন ক্যান্সার গবেষক এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বায়োমেডিকেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক, এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, “নতুন AI-ভিত্তিক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের প্রাথমিক উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এটি প্রথাগত স্ক্যান পদ্ধতির চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি নির্ভুল এবং রোগীর জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।” এই পরীক্ষা কোষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ক্যান্সারের লক্ষণ খুঁজে বের করে এবং খুব অল্প সময়ে ফলাফল প্রদান করে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই পদ্ধতি স্বাস্থ্যসেবার খরচ হ্রাস এবং সময় সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আরেকজন বিশেষজ্ঞ, ড. মার্টিন গ্রেগরি, যিনি লন্ডনের ইনস্টিটিউট অফ ক্যান্সার রিসার্চে কাজ করছেন, বলেন, “আলো-নির্ভর জিন থেরাপি এখন ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষের শক্তি কেন্দ্র বা মাইটোকন্ড্রিয়া নিষ্ক্রিয় করা হয়, যা কোষের বৃদ্ধি থামাতে কার্যকর। এটি কেমোথেরাপির তুলনায় অনেক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।”

তরল বায়োপসি সম্পর্কেও গবেষকদের অনেক ইতিবাচক মন্তব্য রয়েছে। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ড. রাহুল সেন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রক্তের মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্তকরণের এই পদ্ধতি রোগীদের শারীরিক কষ্ট কমিয়ে আনতে সক্ষম। এটি দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল প্রদান করে, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সার নির্ণয়ে।”

এছাড়া ইমিউনোথেরাপি প্ল্যাটফর্মও ক্যান্সার চিকিৎসায় এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এই প্ল্যাটফর্ম রোগীর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। ড. অ্যান্দ্রেয়া লরেন্স, যিনি ইমিউনোথেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন, বলেছেন, “এই পদ্ধতিটি এমন সব ক্যান্সার নিরাময়ে কার্যকর, যেগুলো প্রচলিত চিকিৎসায় সহজে সাড়া দেয় না।”

এইসব প্রযুক্তি ক্যান্সার নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পদ্ধতি ভবিষ্যতে আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হবে, যা সারা বিশ্বে ক্যান্সার রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করবে।