এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জলাবদ্ধতার কবলে সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার প্রায় ৫০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন তারা।
জানা যায়, বর্ষা শেষ হয়ে প্রকৃতিতে এখন হেমন্ত। তবুও সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কাঁচা ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। এক মাস আগে বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা দুটিতে পানি ঢুকে পড়েছে। একইসঙ্গে কয়েকদিনের ভারিবর্ষণে ভেসে গেছে মাছের ঘের, তলিয়ে যায় ফসলি জমি। প্রকৃতি স্বাভাবিক হলেও রয়ে যায় জলাবদ্ধতা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। নাজুক স্যানিটেশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। দীর্ঘদিন পানিতে থাকায় প্রকোপ বেড়েছে নানা রোগবালাইয়ের।
স্থানীয়রা জানান, ওপর থেকে যে পানিগুলো আসছে, সেগুলো ওখানেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদি শালিখা নদীর স্লুইসগেটের আগে ও পেছনে ছড়ানো থাকতো তাহলে এই জলাবদ্ধতা হতো না। এছাড়া এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কও পানির নিচে রয়েছে। প্রভাবশালীরা বিভিন্ন খাল-বিল দখল করে মাছের ঘের তৈরি করায় পানি নেমে যেতে পারছে না। দুর্ভোগ থেকে মুক্তির জন্য দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
তালা উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্টে আছি। আমাদের ঘর-বাড়ি ডুবেছে, আমাদের ধান নাই; আমাদের সব প্লাবিত হয়ে গেছে।’
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির কারণে ঠিকভাবে এই খননগুলো হচ্ছে না। যার জন্য কোনো পানি সরতে পারে না, একটু বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হয়।’
সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বেতনা নদীর পানির লেভেল যখন নেমে যাবে, তখন আমরা সেগুলো খুলে দিয়ে দ্রুত পানি বের করার চেষ্টা করবো। জলাবদ্ধ এলাকার পানির উচ্চতার চেয়ে নদীর পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় তৈরি হয়েছে দীর্ঘ জলজট বলে জানান তিনি।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘খাল দখল করে অবৈধভাবে তৈরি করা মাছের ঘের উচ্ছেদে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। সরকার জনস্বার্থ বিঘ্নিত হোক তেমন কোনো কাজ করবে না। প্রত্যেকে কিন্তু তার নিজের জায়গাটা আবদ্ধ করেছে, তাহলে পানিটা কোন দিকে যাবে। এজন্য অপেন একটা মুখ আমাদের রাখতে হবে।’
জেলা মৎস্য ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জলাবদ্ধতায় ৫ হাজার ৭৮৮টি মৎস্য ঘের ও ৩৪৪টি পুকুর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া ৫ হাজার হেক্টর আমন ধান ও তিন হাজার হেক্টর সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।