বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচীকে বেগবান করার লক্ষ্যে এবং দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি)। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সংসদ সদস্যবৃন্দ।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশ সফররত গ্যাভি মিশনের সদস্যদের সাথে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’ এক মতবিনিময় সভায় এ ধন্যবাদ দেয়া হয়।
ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিয়ম সভায় সংসদ সদস্যবৃন্দ দেশের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি, টিকার প্রযুক্তি সরবরাহ করা, স্থানীয়ভাবে টিকা প্রস্তুতকরণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লোকবল সংকট নিরসন, তামাকের ব্যবহার কমাতে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি,এবং জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় অবিলম্বে তামাক আইন সংশোধনের বিষয়গুলো সভায় তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি বলেন, “আমরা জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গ্যাভিকে অনুরোধ করেছিলাম এবং তারা আমাদের অনুরোধ গ্রহণ করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় আমরা গ্যাভিকে ধন্যবাদ জানাই। গাভি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং এদেশে টিকাদানের সাফল্য তাদেরও অর্জন। আমাদের সবাইকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির জন্য কাজ করতে হবে।
সভায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন, “টিকাদানে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে তবে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আমাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ টিকাদানের পক্ষে দেশ। ২০৩০ সাল পর্যন্ত তহবিল অব্যাহত রাখার জন্য আমি গ্যাভিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের শক্তি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি আমাদের জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ফোরামের উপদেষ্টা জনাব আ, স, ম, ফিরোজ এমপি বলেন, “আমি আশা করি আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবো। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দূরদর্শী। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। টিকাদানে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প রয়েছে। টিকাদান কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং গ্যাভির মধ্যে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম (টিটু) এমপি বলেন, “গ্যাভি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। তাদের সহায়তায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবা অতীতে অনেক উন্নতি করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের অবদান মনে রাখার মতো। আমরা যদি সময়মত পদক্ষেপ নিতে না পারি তাহলে আগামীতে সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে। ”
গ্যাভির সিনিয়র কান্ট্রি ম্যানেজার, নিলগান আয়দোগান বলেন, “আমরা ২০০১ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছি। আমাদের সহায়তার মধ্যে রয়েছে দক্ষতা বৃদ্ধি, কারিগরি সহায়তা, কোভিড-১৯ টিকা সহায়তা। বাংলাদেশে এ বছরই শুরু হতে যাচ্ছে এইচপিভি টিকা কার্যক্রম যা জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখবে। বাংলাদেশে টিসিভি এবং জেই টিকাও চালু করা হবে। আমরা টিকাদান কর্মসূচি চলমান রাখতে সংসদ সদস্যদের অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমের সত্যিই প্রশংসা করি।”
এর আগে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম জোরদারকরণে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ, বাংলাদেশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আর্থিক ও কর্মসূচিগত স্থায়িত্ব, এবং বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে পৃথক পৃথক তিনটি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস-চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ, গ্যাভির সিনিয়র কান্ট্রি ম্যানেজার নিলগান আয়দোগান, এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (EPI) পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. নিজাম উদ্দিন।
আলোচনা সভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক এমপি, জনাব আ, স, ম, ফিরোজ এমপি, ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল এমপি, জনাব মো. আফতাব উদ্দিন সরকার এমপি, জনাব আহসানুল ইসলাম (টিটু) এমপি, বেগম শিরীন আখতার এমপি, বেগম শিরীন আহমেদ এমপি, বেগম শবনম জাহান এমপি, বেগম হোসনে আরা এমপি, জনাব মনিরা সুলতানা এমপি, অ্যাড. সৈয়দা রুবিনা আক্তার এমপি, অ্যাড. জাকিয়া তাবাস্সুম এমপি, অ্যাড. আদিবা আনজুম মিতা এমপি, জনাব রত্না আহমেদ এমপি, এবং জনাব নার্গিস রহমান এমপি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম।