বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর এখন নিয়মিত। এটি বর্ষা সিজনের রোগ হিসেবে পরিচিত হলেও এখন প্রায় সারা বছরেই বেশ কম লেগে থাকছে। এই রোগে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। ম্যালেরিয়ার মতো এটাও মশাবাহিত রোগ। ম্যালেরিয়া যেমন মৃত্যু ঝুঁকি এবং জনাতঙ্ক তৈরি করে, ডেঙ্গু ও তাই। চিকিৎসা বিজ্ঞান ম্যালেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে, ডেঙ্গু রোগকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। তবে তার জন্য সকল স্তরে সতর্কতা প্রয়োজন।
এই জ্বর এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিস মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়, কিন্তু রাতে কামড়ায় না বিষয়টা এরকম না। কাজেই দিনে রাতে সব সময় মশারী ব্যবহার করে ঘুমাতে হবে সবাইকে। অনেকে বলেন, মশারীতে আমার ঘুম আসে না। এটা সাইকোলজিক্যাল। মশারী টানানো অভ্যাসে পরিণত করতে করতে এটি কেটে যাবে। আগে তো জীবন রক্ষা। এভাবে ভাবলে ঐ সাইকোলজি কেটে যাবে। আর ঘুম আসলে মানুষ ট্রাকে ও ঘুমায়। কাজেই ঘুম না আসার অজুহাতে মশারী টানানো ছাড়া ঘুমাতে বিরত থাকুন। কেননা পরিবারের যেকোন সদস্য আক্রান্ত হলে বাকিরা ও ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
এডিস মশা থেকে যেহেতু এটি ছড়ায়, সেজন্য মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর এবং মেয়রকে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বৈজয়িক উপায়ে অর্থাৎ কীটতত্ত্ববিদ এর তত্বাবধানে মশক নিধনে বাধ্য করতে হবে। বাধ্য করতে হবে কথা টা একজন যে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বডি বা প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করলে আজকে নগরগুলোতে এডিস মশা বাড়তো না, ডেঙ্গু জ্বর ও এই পর্যায়ে আসতো না। আর পারিবারিক পর্যায়ে ও এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করাতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তারপর ও ডেঙ্গু হয়ে গেলে কি করবেন?
মোট কথা ডেঙ্গু জ্বরের তীব্রতা এবং জটিলতা নির্ভর করে, কততম আক্রমণ তার উপর। সাধারণত প্রথমবার ডেঙ্গু জ্বর আর সাধারণ ভাইরাস জ্বর এর মধ্যে তেমন কোন বেশি পার্থক্য নেই। প্রথম বর আক্রান্ত হলে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। ঘরে বসে ই চিকিৎসা নিলে এটি সেরে যায়। তবে অবশ্য ই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। আর দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।
কাজেই ডেঙ্গু জ্বর মানেই আতঙ্ক নয়, এটি নির্ভর করে আক্রমণের ধরণ এবং অন্য কোন রোগ একি সাথে শরীরে আছে কিনা তার ওপর।
ডাঃ সুশান্ত বড়ুয়া
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক।
সদস্য সচিব, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি,চট্টগ্রাম।