এডিসের ‘রমন ক্রিয়া’য় হস্তক্ষেপ করতে জানলে নাকি এডিস দমন সম্ভব! কথাটা অমানবিক শোনায়, তবে মানব প্রজন্মকে বাঁচাতে তাই করতে হবে। এটি আমার মুখের কথা নয়। স্বয়ং কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ। তাঁরা বলেন এডিস দমন হলে করতে হলে জনসচেতনতা যেমন দরকার, তারচে বেশি জরুরী হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এডিস নিধন। এই এডিস মশা মারার উপযুক্ত উপায় হলো প্রাপ্ত বয়স্ক এডিস মারা আর তাদের লার্ভা ধ্বংস করা।
তাহলে দেখা যাক কিভাবে বেশির ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক এডিস মারা সম্ভব?
এডিস মশারা ডেটিং বা মিট করতে বের হয় গোধূলির দু’ঘন্টা আগে আগে । এই ক্ষণকে বলা হয় মশা মারার ‘উইন্ডো পিরিয়ড'(windo period). অর্থাৎ এই উইন্ডো পিরিয়ড এ বেশির ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক এডিস মশা খোলা হাওয়ায় মিট করে।
দলে দলে জোড় বেধে রমন ক্রিয়ায় লিপ্ত হতে বাসা বাড়ি কিম্বা পাশের গাছগাছালি থেকে বাতাসে উড়ে। এই সময়ে যদি মশা মারার কার্যকর ঔষধ ছিঠানো হয় বা ফগিং করা যায় তবে বেশি এডিস মশা ধ্বংস হয়। প্রায় ৯০%-৯৫% প্রাপ্ত বয়স্ক এডিস মারা সম্ভব।
বাকি হলো লার্ভা বা ডিম ধ্বংস করা :
সেটাও সম্ভব। কার্যকর লার্ভিসাইড( larvicide ) ছিটানোর মাধ্যমে। লার্ভার মিনিমাম সোর্স হলো পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টব, বিভিন্ন ক্যান, বা ঘরের কোনায় জমা স্বচ্ছ পানি। আর ম্যাক্সিমাম সোর্স হলো unreconstructed building এর বেইসম্যান্ট আর লিফট এর হোল।
এসব জায়গায় স্ব স্ব ভবন মালিক বা প্রজেক্ট পরিচালককে সরকার কতৃক লার্ভিসাইড সরবরাহ করলে অথবা সরাসরি কতৃপক্ষ লার্ভিসাইড ছিটালে অবশ্য ই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসবাহী এডিস মশা ধ্বংস করা সম্ভব। আর এই key points গুলো সফলভাবে অনুসরণ করতে পারে কেবল কীটতত্ত্ববিদ এর নেতৃত্বে।
সেজন্য প্রত্যেক সিটি করপোরেশন, পৌর সভা এবং জেলা উপজেলায় কমপক্ষে একজন করে কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিয়ে মানুষের জীবন, শিশুর জীবন, সকলের জীবন রক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে কাল বিলম্বের সুযোগ নেই।
লেখক: ডাঃ সুশান্ত বড়ুয়া
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক
এবং
সদস্য সচিব, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রাম।