ঢাকাশনিবার , ১৭ জুন ২০২৩
  • অন্যান্য

তরুণদের রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন জরুরি : সাবের হোসেন চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুন ১৭, ২০২৩ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ । ৮৭৮ জন

তরুণদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বিদ্যমান তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত সংসদে পাশ করা প্রয়োজন। কারণ জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই তামাকের ভয়াল থাবা থেকে জনসাধারণ এবং তরুণদের বাঁচাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চের আহ্বায়ক সাবের হোসের চৌধুরী এমপি।

আজ শনিবার (১৭ জুন, ২০২৩) কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার মিলনায়তনে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চের আহ্বায়ক এবং প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চের সমন্বয়ক নাইমুল আজম খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান নূর এমপি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়ার (রিজভী), বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক এবং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডস্’র ভাইস প্রেসিডেন্ট বন্দনা সাহ।

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করণীয় শীর্ষক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. আসাদুজ্জামান নূর বলেন, তামাকপণ্যের ব্যবহার জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর এটা প্রায় সবাই জানেন। তারপরও আমাদের দেশে তামাকপণ্যের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য তামাকপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিতে হবে। একই সঙ্গে তামাকের ক্ষতিকর দিকসম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। তাহলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে শিক্ষকরাই মূল ভূমিকা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হলেও দেশের উন্নয়নের মুল চালিকাশক্তি যুব সমাজ নানাবিধ নেশা আসক্তিতে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষতঃ তামাক সেবনের মাত্রা মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণ সমাজের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা না গেলে দেশ ভবিষ্যতে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। তাই দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে ধূমপানমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। একই সঙ্গে তারা শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে আন্তরিকভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতায় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চ এই সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডস্’র এডভোকেসি ম্যানেজার (সিটিএফকে) আতাউর রহমান মাসুদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। আর ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এ ছাড়া তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে দেশে প্রায় এক লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যান।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তামাকমুক্ত মঞ্চ, ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করে। সেগুলো হলো- আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডক্টিস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।