ঢাকাশনিবার , ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফি কিডস’-এর নতুন অনুসন্ধান

তামাক শিল্পের বিজ্ঞাপন পৌঁছে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিশুর কাছে

পাবলিক হেলথ ডেস্ক
ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ ১০:১৭ অপরাহ্ণ । ৫১৯ জন

ওয়াশিংটন, ডি.সি.: ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (BAT) কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফি কিডস’।

ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো হলো বিশ্বের দুটি সবচেয়ে বড় ব্যবসা করা তামাক কোম্পানি। এরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুদের জন্য তামাক এবং নিকোটিন পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফি কিডস’ বা তামাকমুক্ত-শিশু প্রচারাভিযানের পক্ষ থেকে গতকাল ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

#SponsoredbyBigTobacco প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে যে কীভাবে দুটি তামাক জায়ান্ট ৬০টির বেশি দেশকে লক্ষ্যবস্তু করে বিস্তৃত বিপণন প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। এরা যেসব পণ্যের প্রচার চালাচ্ছে সেগুলো হলো ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর নিকোটিন পাউচ Velo, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর একটি ই-সিগারেট Vuse, এবং ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালের পণ্য IQOS। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং ফিলিপ মরিস বিপণন বিষয়বস্তুর সাথে জড়িত দর্শকদের মধ্যে চল্লিশ শতাংশ হলো ২৫ বছরের কম বয়সী যুবক।

Velo, Vuse এবং IQOS প্রচারকারী বিষয়বস্তু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (X, আগের টুইটার) এবং টিকটক জুড়ে ৩.৪ বিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এই তিনটি ব্র্যান্ডের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ৩৮৫ মিলিয়নেরও বেশি লোক দেখেছে, যার মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন তরুণ এবং ১৮ বছরের কম বয়সী ১৬ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী রয়েছে।

প্রতিবেদনে দুটি বৈশ্বিক তামাক কোম্পানির অনলাইনে তরুণদের কাছে পৌঁছাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। এ কৌশলগুলোর মধ্যে তামাক কোম্পানিগুলো দিয়ে পরিচালিত জনপ্রিয় ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টগুলো থেকে সরাসরি পণ্য বিপণন, অর্থ প্রদানের বিজ্ঞাপন, প্রতিযোগিতা এবং খেলাধুলা এবং সঙ্গীত স্পনসরশিপ অন্তর্ভুক্ত।

প্রতিবেদন অনুসারে, তামাক কোম্পানিগুলো ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম নীতির সরাসরি লঙ্ঘন করে। তাদের ব্র্যান্ডগুলো অনলাইনে বাজারজাত করার জন্য প্রভাবশালী এবং কন্টেন্ট নির্মাতাদের এক বিশাল নেটওয়ার্কের সুবিধা নেয়। নাগাল, ইম্প্রেশন এবং প্রামাণিকতার উপলব্ধি সর্বাধিক করতে, তামাক কোম্পানিগুলো প্রভাবকের মিশ্রণ ব্যবহার করে— প্রায় ১ হাজার অনুগামীদের মাইক্রো প্রভাবশালী থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ অনুসরণকারীর সাথে সুপরিচিত সেলিব্রিটি পর্যন্ত৷ তামাক কোম্পাগিুলো প্রবণতামূলক বিষয়গুলো সম্পর্কে পোস্ট করার জন্য এবং তরুণদের এক বিরাট দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন আগ্রহসহ প্রভাবশালীদের সন্ধান করে যা না হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে তামাক বা নিকোটিন সামগ্রী দেখতে পাওয়া যায় না।

এদের অনুসন্ধান জানাচ্ছে, তামাক কোম্পানির জন্য প্রচারিত কন্টেন্টগুলো বেশিরভাগ প্রচারিত হয় প্রভাবশালী (৩৭ শতাংশ) হলো ‘সৃজনশীল’ যেমন সঙ্গীতশিল্পী, ডিজে, অভিনেতা বা শিল্পীদের দিয়ে। এর পরেই আছে ‘ফ্যাশন’ নির্মাতা (৩০ শতাংশ); ‘লাইফস্টাইল’-বিষয়ক নির্মাতা (২৫ শতাংশ) এবং ‘ক্রীড়া’-বিষয়ক নির্মাতা (আট শতাংশ)।

তামাক কোম্পানিগুলো এক ধরনের ‘সারাউন্ড সাউন্ড’ বিপণন প্রভাব তৈরি করতে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর সাথে স্পনসরশিপ নিচ্ছে৷সেগুলো হলো ম্যাকলারেন, ফর্মুলা ওয়ান, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীত উৎসব টুমরোল্যান্ড, এবং স্পটিফাই।

‘এই প্রতিবেদনের ফলাফল এটাকে স্পষ্ট করে তুলেছে যে জায়ান্ট টোব্যাকো কোম্পানিগুলো সর্বাত্মকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুবকদের টার্গেট করে চলেছে এবং এটি বন্ধ করতে হবে,’ বলেছেন তামাকমুক্ত শিশুদের জন্য প্রচারাভিযানের সভাপতি এবং সিইও ইয়োলোন্ডা সি. রিচার্ডসন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে পরিশীলিত বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে রয়েছে তামাক কোম্পানিগুলো– কারণ লক্ষ লক্ষ শিশুদের কাছে পৌঁছে যাওয়া বিপণন কোনোভাবেই দুর্ঘটনাক্রমে ঘটে না। সরকারগুলোকে জরুরিভাবে অনলাইনে তামাক বিপণনকে বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে উপস্থিত তামাক এবং নিকোটিন বিপণনের জন্য আইনত দায়বদ্ধ।

ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক, যা এখন মেটা, ২০১৯ সালে ঘোষণা করেছে যে তারা জায়ান্টদের ই-সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের প্রচার নিষিদ্ধ করবে। কিন্তু প্রতিবেদন বলছে যে তামাক কোম্পানিগুলো নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেছে এবং মেটা তাদের ঘোষণা প্রয়োগ করেনি।

আগামী ফেব্রুয়ারি ’২৪-এ তামাক নিয়ন্ত্রণে WHO ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের ১৮৩টি পক্ষ পানামায় মিলিত হবে, যেখানে সরকারগুলো সামাজিক মিডিয়াসহ আন্তঃসীমান্ত ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ওপর নির্দিষ্ট নির্দেশিকা গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করবে। নির্দেশিকা গৃহীত হলে সেটা কনভেনশনের দেশগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ তামাক এবং নিকোটিন পণ্যগুলোর আন্তঃসীমান্ত বিজ্ঞাপনগুলোকে আরো কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ করতে সহায়তা করবে।