ঢাকারবিবার , ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে তরুণ সমাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ ১২:৩৩ অপরাহ্ণ । ৭১ জন

দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ লোক তামাক ব্যবহার করেন। এর মধ্যে তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছেন ১ লাখ ৬১ হাজার জন মানুষ। প্রাণঘাতী এই নেশাদ্রব্যের হাত থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন তরুণ সমাজ। একই সঙ্গে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন তরুণ সমাজ।

শনিবার (২১ সেপ্টেবর) বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বেসরকারী নারী উন্নয়ন সংস্থা ‘নারী মৈত্রী’র আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪০ জন তরুণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে তরুণ সদস্যরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি তুলে ধরেন।

কর্মশালায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষের প্রাণ ঝরছে। মৃত্যুর এই মিছিল ঠেকাতে তরুণেরা তামাক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করবে। পাশাপাশি নিজের পরিবারকে তামাকের প্রভাবমুক্ত রাখবে এবং অন্যদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যাতে মন্ত্রীসভায় সংশোধিত আইনটি দ্রুত উত্থাপন করে সে লক্ষ্যে সহযোগিতা করা এবং অনুমোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো দাবি জানানোর জন্য এই তরুণ সমাজকে কাজ করার আহবান জানান। এছাড়াও তামাকের বিরুদ্ধে সংশোধিত আইন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ভাবে উপস্থাপন করার আশ্বাসও দেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী এ আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, বর্তমান যুগে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই। এসময় তরুণ সমাজকে ধূমপান ও তামাক গ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়ে তামাকের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখারা আহবান জানান। এছাড়াও তামাক বিরোধী সকল কার্যক্রমে নারী মৈত্রীর পাশে থাকার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাকের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান থেকে রুখে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শেরে-ই- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তনুশ্রী হালদার বলেন, দেশে ব্যাপকহারে ই-সিগারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভেপিং এর ব্যবহারের প্রবণতা তরুণদের মাঝে বেশি দেখা যায়। যা দেশের জন্য অশনিসংকেত। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এরইমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় বাংলাদেশেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, সুস্থ প্রজন্ম বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশে তামাক এবং তামাকজাত পণ্যের বিস্তার হয়েছে ভয়াবহভাবে। দেশে ১৫ বছরের ওপরে ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং এর নিচে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুই ধূমপায়ী। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি।

নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সামঞ্জস্য আনতে অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা; তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কর্মশালায় বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া, কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা এবং সিটিএফকের এডভোকেসি ম্যানেজার আতাউর রহমান।

কর্মশালায় ১৬টি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তামাকের বিরুদ্ধে কাজ করবেন বলে জানান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন এবং তামাক বিরোধী সকল কার্যক্রমে এগিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জাগান তারা।