বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তেছে। ঠান্ডায় হাত-পা মাইরে নেয়। তারপরও বাবা কি করব। জীবন কর্ম তো এটার ওপর। ঘরে বইসে থাকলে পরিবার নিয়ে অভুক্ত থাকা লাগবি। সেজন্যই সকাল সকাল বেরুতি অয়। তবে ঠান্ডার কারণে রাস্তায় মানুষজন একেবারেই কম। তা একেবারে নেই বললেই চলে’। — খোদ ঢাকাতেই শীতের তীব্রতা নিয়ে এভাবেই বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মনসুর আলী। নীলক্ষেত মোড়ে প্লাস্টিকের মোড়ায় বসে ছোট একটি বাক্সে পান-সিগারেট বিক্রি করেন তিনি।
তার পাশেই গুটিসুটি মেরে বসে কাজের সন্ধানে অপেক্ষা করতে দেখা গেল দিনমজুর রফিকুলকে। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে এখানে কোদাল আর ঝুড়ি নিয়ে আসি। তারপর সারাদিনের কন্টাক্টে কোথাও না কোথাও কাজে চলে যাই। তবে গত কয়দিন ধরে এখানে মানুষজন কম আসছে। আজ এখন পর্যন্ত কোনো কাজকর্ম পাইনি। আসলে শীতের কারণে মানুষজন কম বের হচ্ছে। যার কারণে বেলা বাড়লেও সড়কে অন্যান্য দিনের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কম। আর এই ঠান্ডার মধ্যে আমাদের মত গরীব মানুষের খুব কষ্ট হয়। একদিন কাজ করতে না পারলে খাবার টাকা জোগাড়েই টানাটানি লেগে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৩ জেলার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেই রোববার (১৪ জানুয়ারি) সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। তবে আজ সারাদিনও সূর্যের দেখা পাওয়া যাবে না বলেও পূর্বাভাসে জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা বাড়লেও ঢাকার আকাশে সূর্যের দেখা নেই। বাইরে বেরোলেই ঠান্ডা হিমেল হাওয়া এসে লাগছে গায়ে। ঠান্ডার কারণে সড়কের মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। কর্মচাঞ্চল্য নেই কর্মব্যস্ত এলাকাগুলোতেও। সড়কগুলোর বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহনগুলোকে। সকালের পর বেলা বাড়ার সাথে সাথে আরো তীব্র হয়েছে কুয়াশা। এমন অবস্থায় বেশ বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষজন। শুধু নিম্নআয়ের মানুষজনই নয় বরং একইসঙ্গে যারা বাইক রাইড করেন তারাও পড়েছেন বেশ সমস্যায়। যাত্রী না পেয়ে বিভিন্ন মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ সারাদিন (১৪ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এছাড়া, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
প্রসঙ্গত, শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেইসঙ্গে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।