ঢাকামঙ্গলবার , ৩১ অক্টোবর ২০২৩

দক্ষিণ সিটিতে ৮ সারির সড়ক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ৩১, ২০২৩ ৫:১২ অপরাহ্ণ । ১৬৬ জন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় অনুমোদন পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গৃহিত ‘ইনার সার্কুলার রিং রোডের রায়েরবাজার স্লুইস গেট হতে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন’ শীর্ষক ৮ সারির (লেন) সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।

আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরে যানজট নিরসনে সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (RSTP) ইনার সার্কুলার রিং রোডের উন্নয়নের প্রস্তাবনা রয়েছে। সে প্রস্তাবনার আলোকেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় করে রায়েরবাজার স্লুইস গেট হতে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কটিকে ৮ সারিতে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ইনার সার্কুলার রিং রোডের রায়েরবাজার স্লুইসগেট থেকে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত ৫ কিমি অংশে ৮ সারির সড়ক নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে মাঝের দুই-দুই সারি করে ৪ সারি এক্সপ্রেস ওয়ে এবং দুই পাশে দুই-দুই সারি করে ৪ সারি সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এর ফলে বর্তমানে বিদ্যমান ২০ ফুট প্রশস্ততার সড়কটি ১৪০ ফুটে উন্নীত হবে। এছাড়াও সড়কের প্রতি পাশে ৫ ফুট করে উভয় পাশে মোট ১০ ফুট প্রশস্ততার ১০ কিমি ফুটপাত ও ১০ কিমি আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। সেজন্য ফুটপাতসহ অতিরিক্ত ১৩০ ফুট সড়ক উন্নয়নে বিদ্যমান গড় ৮ ফুট গভীরতার রাবিশ (আবর্জনা) অপসারণ করতে হবে, যা পরবর্তীতে বালু ভরাটের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর সড়ক নির্মাণ করা হবে।

এছাড়াও এই সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সড়কের উভয় পাশে ৮ কিমি গার্ডওয়াল ও রিটেইনিং ওয়াল, ৩টি ভ্যাহিক্যুলার ওভারপাস, ৩টি ফুটওভারব্রিজ, ৬টি যাত্রী ছাউনি ও বাস-বে এবং ৩টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) নির্মাণ করা হবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে ৫৬৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ৮টি টাওয়ার স্থানান্তর বাবদ ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ সকল বৈদ্যুতিক খুঁটি ও টাওয়ার স্থানান্তরের জন্য ডিপিডিসিকে ১২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮ কিমি গার্ডওয়াল ও রিটেইনিং ওয়াল, ৩টি ভ্যাহিক্যুলার ওভারপাস, ৩টি ফুটওভারব্রিজ, ৬টি যাত্রী ছাউনি ও বাস-বে, ১০ কিমি ফুটপাত, ১০ কিমি আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য ৪০০ কোটি টাকা, ২২ জন পরামর্শকসহ ৩৩ জন জনবলের জন্য ৩০ মাসে ১৪ কোটি টাকা এবং ৯০০টি এলইডি বাতি স্থাপনে সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

প্রকল্পের উল্লিখিত অনুষঙ্গ বাদে ১৪০ ফুট প্রশস্ততার ৫ কিমি দৈর্ঘ্যের সড়কের নির্মাণে ব্যয় রাখা হয়েছে ৩৮৯ কোটি টাকা।

প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানবাহনগুলো সার্ভিস রোড হতে এক্সপ্রেসওয়েতে এবং এক্সপ্রেসওয়ে হতে সার্ভিস রোডে প্রবেশ করতে পারবে। এতে করে সড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকার যানবাহনগুলোও এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের সুবিধা পাবে। তাছাড়া সড়কের এলাইনমেন্টে ৩টি ওভারপাস রাখা হয়েছে। এতে করে পার্শ্ববর্তী এলাকার যানবাহনগুলো এক্সপ্রেসওয়ের নিচ দিয়ে পারাপার করতে পারবে।

ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরীর অভ্যন্তরে যানজট কমানোর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নষ্ট হওয়া কর্মঘণ্টা হ্রাস করা এবং ফলশ্রুতিতে জ্বালানি অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। কারণ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী ২১ জেলার যানবাহনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৬ জেলার যানবাহনও যাত্রাবাড়ী মোড় দিয়ে ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ করে। ফলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে সাভার, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, গাজীপুরসহ উত্তর বঙ্গগামী যানবাহনগুলোর আর ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরে প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা পড়বে না।

এছাড়াও বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল সংলগ্ন হওয়ায় প্রস্তাবিত সড়কে প্রশস্ত হাঁটার পথ এবং বৃক্ষ রোপণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য যেমনি রক্ষা হবে এবং তেমনি নগরবাসী নদীর নান্দনিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।

উল্লেখ্য যে, ইনার সার্কুলার রিং রোডের রায়েরবাজার স্লুইস গেট থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ১২ কিমি অংশের বিদ্যমান সড়কটিকে ৮ সারিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা ২ ধাপে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে রায়েরবাজার স্লুইস গেট হতে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প আজ একনেক সভায় অনুমোদন পেলো। ২য় ধাপে লোহার ব্রিজ হতে পোস্তগোলা পর্যন্ত বাকী ৭ কিমি রাস্তা নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মোট ৯৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০২৩ হতে জুন ২০২৬ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। বাকি অর্থ সরকার যোগান দেবে।