ঢাকারবিবার , ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য

ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণে মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ ৬:০৫ অপরাহ্ণ । ৯২ জন

তামাকের ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গনসচেতনতা এবং গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তামাকপণ্যে সম্পর্কে প্রতিটি বাবা-মা এবং অভিভাবককে সচেতন করতে হবে এবং তাদের অংশগ্রহণে তামাক বিরোধী প্রচারণাকে আরো জোরদার করতে হবে। তাই সুস্থ সবল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লাবের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্লাবের নানান কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে তামাকের ব্যবহার রোধ করতে উৎসাহিত করছি বলে জানিয়েছেন বক্তারা।

আজ (২২ সেপ্টেম্বর) রবিবার বনশ্রী আব্দুর রাজ্জাক স্কুল এবং কলেজ মিলনায়তনে, ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রনে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ক্লাবের নেতৃত্বে ‘তামাকপণ্য বর্জন করি, তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’ শীর্ষক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আব্দুর রাজ্জাক স্কুল এবং কলেজ ঢাকা, সহকারী অধ্যক্ষ বেগম সানজিদা সুলতানা বলেন, তামাকের ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গনসচেতনতা এবং গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তামাকপণ্যে সম্পর্কে প্রতিটি বাবা-মা এবং অভিভাবককে সচেতন করতে হবে এবং তাদের অংশগ্রহণে তামাক বিরোধী প্রচারণাকে আরো জোরদার করতে হবে এবং নিজেদেরকে দক্ষ এবং যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ঢাকার মিরপুর ও সাভারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের লালা পরীক্ষা করে ৯৫% ছাত্র/ছাত্রীর লালায় নিকোটিন পাওয়া গেছে। এরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

থানা একাডেমিক সুপারভাইজার, বাড্ডা, জনাব আব্দুল মোমেন বলেন, শিশুরাই আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ। দেশের ৪৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীই তরুণ এবং স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং এসব তরুণের ৩৫ শতাংশ তামাকজাতপণ্যে আসক্ত যা জাতিগত ভাবে আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই শিশুদের জীবন রক্ষায় তামাকের ব্যবহার রোধ করা এবং তাদেরকে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা জরুরী।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সুস্থ-সমৃদ্ধ দেশের জন্য ধূমপানমুক্ত সমাজ দরকার। শিশুদের বিকাশের এই সময়ে আমাদের এখনি সচেতন হতে হবে। বিশ্বজুড়ে তামাকজনিত রোগে বছরে প্রায় ৮০ লক্ষের বেশি মৃত্যু হয়, এর মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লক্ষ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৩-১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে (গ্লোবাল ইয়ুথ ট্যোবাকো সার্ভে- ২০১৩) শতকরা ৬.৯% কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যাবহার করে, তাদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা শতকরা ৯.২% এবং মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ২.৮%। তাই আমাদের লক্ষ্যে হতে হবে এই শতকরার পরিমান শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লাবের নেতৃত্বদানকারি মানহা সারাহ এবং মোঃ আবু তালহা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন, সুস্থ সবল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লাবের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্লাবের নানান কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে তামাকের ব্যবহার রোধ করতে উৎসাহিত করছি, যেহেতু তামাক সেবনের কারনে প্রতি বছর বহু মানুষ মৃত্যু বরন করে এবং তারা এই কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে তাদের কিছু যৌক্তিক দাবী তুলে ধরেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বর্তমান আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা। অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে “ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA)” নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (Points of Sale) তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন (Product Display) নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির যে কোন ধরণের সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেট, ট্যোব্যাকো প্রোডক্টিস্-সহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডক্টিস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দ তাদের নিজেদের দৃষ্টিকোন থেকে তামাকের ক্ষতিকর দিক এবং তার প্রতিকার নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এবং তারা দাবী করেন সরকার যেন শিক্ষাঙ্গনের আশে পাশে সকল ধরনের ক্ষণস্থায়ী চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে, কারন এই সকল ক্ষণস্থায়ী চায়ের দোকানে ধূমপানের যাবতীয় সামগ্রী বিক্রয় করা হয়।

এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ময়নারবাগ স্কুল বাড্ডা, নর্থ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, লিটল জুয়েলস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা বৃন্দ।