ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

নতুন রেলপথ পেয়েও কেন ক্ষুব্ধ যশোরবাসী?

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ৩১, ২০২৪ ৪:৩৯ অপরাহ্ণ । ১০৯ জন

পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ নিয়ে খুশি ছিলেন যশোরবাসী। তবে, কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন রেলপথে যশোর হয়ে তিনটির পরিবর্তে চলবে একটি মাত্র ট্রেন। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন যশোর জংশনে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে ঢাকায় চালানো সম্ভব।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু হয়ে যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার নতুন রেলপথের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের শুরুতে। ট্রায়াল রানসহ সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ হয়েছে। যেকোনো সময় চালু হবে নতুন এ রুট। নতুন এ রেলপথ চালু হলে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে অন্তত ১৯৩ কিলোমিটার। তবে এ প্রকল্পকে ঘিরে যশোরবাসীকে দ্রুততম সময়ে ঢাকায় যাতায়াতের যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিলো তার কিছুই হচ্ছে না। বরং রেল কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা মতে নতুন এ রেলপথ চালুর পর যশোর হয়ে বিদ্যমান তিনটির পরিবর্তে চলবে একটি মাত্র ট্রেন। আর খুলনা ঢাকা রুটের ট্রেনগুলো ধরতে হলে যেতে হবে যশোর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের পদ্মবিলা স্টেশনে। এতে বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় হবে। ফলে যশোর অঞ্চলের মানুষের আশা-উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েছে। তারা আশাহত হতে নয় এ রুটের পরিপূর্ণ সুফল পেতে চান। এজন্য যশোর জংশনকে গুরুত্ব দিয়ে অন্তত ৫টি ট্রেন চালুর দাবি তাদের।

তৌহিদ জামান নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী বলেন, ‘যে স্বপ্ন আমাদের দেখানো হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যশোর জংশন ছুঁয়ে মাত্র একটি ট্রেন ঢাকায় যাবে। অন্যান্য ট্রেনগুলো যাবে শহর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দূর দিয়ে। এতো পথ পাড়ি দিয়ে কেউ ট্রেন যাত্রা করবে না। ফলে ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগে যশোর পকেট জেলায় রূপান্তরিত হবে।’

জিল্লুর রহমান ভিটু নামে অপর একজন বলেন, ‘আমাদের আশা-উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েছে। রেলপথ বিভাগের সিদ্ধান্তের কারণে স্বপ্ন ম্লান হতে বসেছে। ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে যশোর সদর উপজেলার পদ্মবিলা রেলস্টেশন। যশোর শহরের মূল স্টেশন থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এছাড়া, বেনাপোল থেকে ৩৫, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর স্টেশন থেকে ৪৫ এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্টেশন থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে পদ্মবিলার অবস্থান। এই অঞ্চলের মানুষকে ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে হলে ১৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পদ্মবিলা স্টেশনে যেতে হবে। যা এই অঞ্চলের যাত্রীদের সময় ও দুর্ভোগ বয়ে আনবে। এতে ট্রেনের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। ফলে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী রেলযোগাযোগের প্রকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।’

বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব রুহুল আমীন বলেন, ‘যমুনা সেতু দিয়ে বর্তমানে যশোরবাসী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের তিনটি ট্রেন পাচ্ছেন। পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প চালু হলে এ রুটে (পদ্মা সেতু দিয়ে) মাত্র একটা ট্রেন পাবে। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ রেলসেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হবে। পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নেই থেকে যাবে। তাই বেনাপোল-যশোর-ঢাকা রুটে দুইটি ও দর্শনা-যশোর-ঢাকা রুটে দুইটি ট্রেন চালু এবং খুলনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা রুটের ট্রেনগুলো বহাল রাখতে হবে।’

যশোর রেলস্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসানের দাবি, মন্ত্রণালয় চাইলে সমস্যা সমাধানে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন যশোর জংশন দিয়ে ঘুরিয়ে নেয়া সম্ভব। তাছাড়া জন দাবি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। বিষয়টির সমাধান হলে কেবল যশোর নয় ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার জনগণও উপকৃত হবে।

প্রসঙ্গত, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ নতুন রুটে যশোর থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগবে মাত্র তিন‌ ঘণ্টা। বর্তমানে যশোর থেকে ঢাকা যেতে লাগে ৮ ঘণ্টা।