ঢাকাসোমবার , ১০ মার্চ ২০২৫

পিটুইটারী গ্লান্ড : রপ্তানির সম্ভাবনা ও বাস্তবতা

রঞ্জন কুমার দে
মার্চ ১০, ২০২৫ ২:৫৯ অপরাহ্ণ । ৭০ জন

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ শুধুমাত্র মাছ রপ্তানিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাছের শরীরের কিছু মূল্যবান অংশও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পিটুইটারী গ্লান্ড, যা প্রতি কেজি কোটি টাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

পিটুইটারী গ্লান্ড হলো মাছের মস্তিষ্কের নিচের অংশে থাকা এক বিশেষ গ্রন্থি, যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ করে। বিশেষত কার্প (Carp) ও ক্যাটফিশ (Catfish) জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে এই গ্লান্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাপী ফিশ হ্যাচারিগুলোতে কৃত্রিম প্রজননের জন্য পিটুইটারী গ্লান্ড থেকে নির্যাস বের করে ব্যবহার করা হয়। এটি মাছের ডিম ছাড়ানোর ক্ষমতা বাড়ায় এবং সফল প্রজননের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও, ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা ও ওষুধ শিল্পে এই গ্লান্ড ব্যবহার করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হরমোন সংশ্লিষ্ট গবেষণায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত, মানবদেহের বিভিন্ন হরমোন থেরাপি ও নিউরোলজিক্যাল গবেষণায় এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এটি নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি পিটুইটারী গ্লান্ডের মূল্য ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে এই গ্লান্ডের চাহিদা ছিল প্রায় ১০০ টন, যার বাজার মূল্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

বাংলাদেশের জলাভূমি, নদী, হাওর ও সমুদ্র উপকূলে প্রচুর পরিমাণে কার্প ও ক্যাটফিশ জাতীয় মাছ পাওয়া যায়। এ কারণে এই খাতে দেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭.৫ টন পিটুইটারী গ্লান্ড রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডলার। সরকারের সহযোগিতায় যদি পরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ ও রপ্তানি প্রক্রিয়া উন্নত করা যায়, তাহলে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

যাঁরা এই খাতে ব্যবসা করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা জরুরি। কোন মাছের গ্লান্ডের চাহিদা বেশি, কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়, রপ্তানির বৈধতা, লাইসেন্স ও নিয়মাবলি কী কী, এবং কোন দেশে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ও মূল্য বেশি, এসব বিষয় জানা আবশ্যক।

বাংলাদেশের মৎস্য খাত কেবল মাছ রপ্তানির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাছের মূল্যবান অংশ রপ্তানির মাধ্যমেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। পিটুইটারী গ্লান্ড রপ্তানি এই সম্ভাবনার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোক্তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকলে, অদূর ভবিষ্যতে এটি দেশের অন্যতম লাভজনক রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রয়োজন মানসম্মত সংগ্রহ ও রপ্তানি প্রক্রিয়া। সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ হলে বাংলাদেশ এই খাতে বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে।