ঢাকাসোমবার , ১৭ জুলাই ২০২৩
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

পরিবেশের জন্য মারাত্বক হুমকি

বিশ্বব্যাপী প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৩৬ হাজার সিগারেটের বাট ফেলছে ধূমপায়ীরা

সুশান্ত সিনহা
জুলাই ১৭, ২০২৩ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ । ২০৫০ জন

বাংলাদেশের প্রতিটি চায়ের দোকান, এমনকী রাস্তাঘাটে অসংখ্য সিগারেটের বাট বা মোথা পড়ে থাকতে দেখা যায়। সিগারেট সেবন করে ফেলে দেয়া বাটগুলো যাচ্ছে ড্রেনে, সেখান থেকে চলে যাচ্ছে নদী হয়ে সাগরে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮ হাজার কোটি শলাকা সিগারেট বিক্রি হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ৮ হাজার কোটি সিগারেটের বাট ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর সিগারেটের বাটের মধ্যে থাকা প্লাস্টিক  পুরো পৃথিবীর মানুষ, পরিবেশ, পানি এবং জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্নক হুমকির কারণ।

গবেষণা বলছে, সারাবিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৩৬ হাজার প্লাস্টিকের ফিল্টারযুক্ত সিগারেটের বাট ফেলা হচ্ছে।  অর্থাৎ সারাবিশ্বে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি বা ৬ ট্রিলিয়ন শলাকা সিগারেট সেবন করে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,  ৬ লক্ষ কোটি শলাকা সিগারেটের  প্লাস্টিক যুক্ত বাটের ৬৫ ভাগ অথ্যাৎ ৪ লক্ষ কোটি বাট যত্রতত্র ফেলছে বিশ্বের ১২০ কোটি সিগারেট সেবনকারী। যা বৃষ্টির পানিসহ ড্রেনের মাধ্যমে এসব  প্লাস্টিক যুক্ত সিগারেটের বাট শেষ পর্যন্ত গিয়ে জমছে সমুদ্রের পানিতে। তাইতো সমুদ্রের পানি ও পরিবেশ দূষণের শীর্ষে রয়েছে এই প্লাস্টিক যুক্ত সিগারেটের বাট বা মোথা। আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিনবাটস.কম এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

শুনতে অবাক মনে হলেও এটাই সত্য, একেকটি সিগারেট শলাকার বাট ৫০০ লিটার পর্যন্ত পানি দূষিত করতে পারে। এজন্যই বলা হয়, বিশ্বের  প্লাস্টিক জাতীয় পরিবেশ দূষণে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে এই সিগারেটের ফিল্টারযু্ক্ত বাট। কারণ সিগারেটের ফিল্টার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় সেলুলোজ এসিটেট নামের এক ধরনের  প্লাস্টিক, যা মোটেও পচনশীল নয়। অনেকেই মনে করে এটা বায়োডিগ্রেডেবল, কিন্তু আসলে তা নয়। একেকটি সিগারেটের  প্লাস্টিক যুক্ত বাটগুলো ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হতে ১৮ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। আর্থ এন্ড এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্সের গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

মাছের মাধ্যমে মানব দেহে ঢুকছে সিগারেট বাটের প্লাস্টিক কণা

মাছসহ সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর ধূমপায়ীদের ফেলা দেয়া এই সিগারেটের বাট। কারণ এই বাটের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র  প্লাস্টিক কণা মাছ এমনকি জলজ প্রাণীর খাবারের মধ্যে ঢুকে যাওয়ায় তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। অর্থাৎ পুরো খাদ্য চেইনে মারাত্নক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এই  প্লাস্টিক যুক্ত সিগারেটের বাট। ফলে একদিকে সরাসরি সিগারেট সেবনের মাধ্যমে হৃদরোগ-ক্যান্সার-স্ট্রোকসহ বিভিন্ন ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অন্যদিকে সিগারেটের ফেলা দেয়া বাটের মাধ্যমে পানি দূষণের কারণে মানবদেহসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্নক বিপদ ডেকে আনছে এই সিগারেট। ধূমপান না করেও সিগারেটের দ্বারা পরোক্ষভাবে দেশে দেশে কোটি কোটি মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ছে।

দ্য ওসান কনজারভেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তাদের সমুদ্র সৈকত পরিস্কার অভিযানে প্রতিদিন ৬০ লাখ সিগারেটের বাট সমুদ্র সৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয়। সংস্থাটির মতে সমুদ্রের পানি দূষণকারী দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে প্যাকেটজাত খাদ্য পণ্যের মোড়ক, সংখ্যায় যা ৩৮ লাখের মতো।

বুর্জ আল খলিফাকে ঢাকা যাবে ১১ হাজার বার!

২০ মিলিমিটার লম্বা এবং ৭ দশমিক মিলিমিটার চওড়া সিগারেটের বাটগুলো পর পর সাজানো হলে তার দূরত্ব হবে ৬ হাজার ২৪০ বর্গ কিলোমিটারের সমান। যা ৬ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমির সমান। যা দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে উচুঁ ভবন বুর্জ আল খলিফা ১১ হাজার বার ঢেকে দেয়া যাবে এই ফেলা দেয়া ছোট্ট সিগারেটের মোথা বা বাট দিয়ে। ফলে ছোট্ট হলেও কতটা পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনে এই সিগারেটের  প্লাস্টিক বাট তা বুঝতে উপরের পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।

আরেক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট এর প্রবন্ধে সিগারেটের  প্লাস্টিক যুক্ত বাটের পরিবেশজনিত ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ফলে জনস্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি পানি, জীববৈচিত্র্যসহ পুরো পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যেখানে সেখানে প্লাস্টিকযুক্ত বাট ফেলা বন্ধের বিকল্প নেই। ২০৪০ সালের মধ্যে  তামাকমুক্ত বাংলাদেশ করার ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাই সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বন্ধে সরকারি সংস্থাগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। না হলে, কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা তথা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া কঠিন হবে।

লেখক : তামাক কর বিশ্লেষক ও বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টেলিভিশন

sinhasmp@yahoo.com