ঢাকাসোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • অন্যান্য

বঙ্গোপসাগরে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাছিম সংরক্ষণ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ । ১৮৭ জন
সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সি টার্টল কনজার্ভেশন গ্রুপ।

সাগরের খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখাসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে সামুদ্রিক কাছিম। সমুদ্র পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ক্ষতিকর জেলিফিস খেয়ে অন্যান্য মাছের প্রজনন ও বিস্তারে অন্যতম ভূমিকা রাখে এই জলজ প্রাণীটি। সমুদ্র বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরেও বাংলাদেশে সামুদ্রিক কাছিমের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।

তাই বিপন্ন এই প্রানীটির সংরক্ষণে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরণ্যক ফাউন্ডেশন। ইউএনডিপি-জিইএফ-স্মল গ্রান্ট প্রোগ্রামের সহায়তায় কক্সবাজারে “ইকোসিস্টেম এওয়ারনেস অ্যান্ড রেস্টোরেশন থ্রু হারমনি (আর্থ)” প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে সামুদ্রিক কাছিমের অস্থায়ী হ্যাচারি তৈরি করা হয়েছে। হ্যাচিং বেডে এ পর্যন্ত ৫৮৭৮ টি ডিম স্থাপন করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে জন্ম নেয়া ১২২২ টি কাছিমের বাচ্চাকে বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল (২৮ এপ্রিল) রবিবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আর্থ প্রকল্পের ইনফরমেশন শেয়ারিং ওয়ার্কশপে এসব তথ্য জানানো হয়।

এসময় বক্তারা বলেন, জেলেদের মধ্যে সামুদ্রিক কাছিম সম্পর্কিত বিভিন্ন কুসংস্কার রয়েছে। যে কারণে মাছ শিকারের সময় কাছিম ধরা পড়লে জেলেরা ডানা কেটে সাগরে ফেলে দেয়। এছাড়াও পরিত্যক্ত জাল, প্লাস্টিক ও নাইলনের রশিতে পেঁচিয়ে প্রচুর কাছিম মারা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন, সৈকতে পর্যটকদের অতিরিক্ত ভিড়, আলো ও শব্দদুষণ, প্লাস্টিক দূষণ, অবৈধ স্থাপনার কারণে সামুদ্রিক কাছির এখন বিপন্ন বলে মত দেন বক্তারা।

কর্মশালায় আরণ্যক ফাউন্ডেশনের হেড অব প্রোগ্রামস মাসুদ আলম খান বলেন, আর্থ প্রকল্পের মাধ্যমে সামুদ্রিক কাছিম ও লাল কাঁকড়া সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান। এর আওতায় তরুণদের নিয়ে ৫ টি করে সি টার্টেল কানজার্ভেশন গ্রুপ ও রেড ক্র্যাব কনজার্ভেশন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সামুদ্রিক কাছিম ও লাল কাঁকড়া সংরক্ষণে স্থানীয় জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে এই দলগুলো।

ইউএনডিপি ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সাগরের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষায় সামুদ্রিক কাছিমের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমুদ্রের পরিবেশের ভারসাম্য বজার রেখে কাছিম শুধু সাগরই বরং, মানব জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনে টেকসই কার্যক্রম ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের আহবান জানান কর্মশালার সভাপতি কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো: আনিসুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো: মাহবুবুর রহমান। কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্য আরো উপস্থিত ছিলেন উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মো: শফিউল আলম ও উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার।

গত বছর শুরু হওয়া আর্থ প্রকল্পের আওতায়, সামুদ্রিক কাছিম ও লাল কাঁকড়া সংরক্ষণ ছাড়াও, শেখ জামাল ইনানী জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমসের কর্যক্রম বাস্তবায়ন করছে আরণ্যক ফাউন্ডেশন।