ঢাকাশনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য

‘বাংলাদেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অর্থ পাওয়ার চেয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২৩, ২০২৪ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ । ৯ জন

কপ সম্মেলনে আমাদের নিগোসিয়েটরদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। কে কত টাকা পেল বা পেল না, এমনটি হলে আমাদের ঐক্য দুর্বল হবে। আর যদি ঐক্য ভেঙে যায় তাহলে আমাদের জন্য সেটি হবে ক্ষতিকর বলে জানিয়েছে পরিবেশ উপদেষ্টা। ঐক্যটা কি ধরনের জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীদের যে মিটিং হয় সেই প্রক্রিয়া যেন অব্যাহত থাকে। তাহলে এটি একটি অর্জন হবে। বাংলাদেশসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো- আমরা যারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, তাদের ঐক্য থাকলে তা এই কপ-২৯ এর বড় একটি অর্জন হবে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর কপ-২৯ সেন্টারে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, ‘এবারের কপ বেশ হতাশা এবং উদ্বেগের।’

জলবায়ু পরিবর্তজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে কত টাকা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থ যদি বলেন, একটা পরিমাণ, যে পরিমাণ পাওয়ার কথা সেই পরিমাণ পাওয়া যাবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। অর্থের পরিমাণ থেকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে অর্থের মানটাতে। অর্থটা কি ঋণ হিসেবে আসবে, না কার্বন ক্রেডিট হিসেবে আসবে, অর্থটা সরাসরি সাহায্য হিসেবে জাতিসংঘের গ্যারান্টি চাই। আমরা যদি অর্থের মানটাতে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারি, তাহলে একটা জয় হিসেবে ধরে নিতে পারব।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, আশা আপনার একরকম, আমার একরকম, আপনি হয়তো ভাবছেন ১.৩ বিলিয়ন টাকা নিয়ে গেলে আমরা ভাল হয়ে যাব। আমি ভাবছি এই মুহূর্তে যদি টাকার অঙ্ককে কেন্দ্র করে আমাদের ঐক্যটা ভেঙে যায়- তাহলে এটা অনেক বড় একটা ক্ষতি হবে। আর যদি ঐক্যটা ধরে রাখতে পারি সেটা আমার ও আমাদের আশার জায়গা। অর্থের মানের ব্যবস্থার সিদ্ধান্তে আসতে পারি এবং সেটি পাবলিকস ফান্ডিং হতে হবে।

তিনি বলেন, অর্থের মানের দিকে জয়ী হতে পারলে বিশাল জয় হবে। বাংলাদেশের নাগরিক যারা ফেনীতে ,কুমিল্লায়, শেরপুর বা সিলেটে বন্যা আক্রান্ত শিশু প্রতি জনের ৯০ ডলার ঋণের বোঝা মাথায় আছে। মানে হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সময় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেই প্রকল্প ঋণের বোঝা মাথায় রয়েছে। তাই অর্থের মানটাই লাভ করতে পারলে বড় জয় হবে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কত টাকা পেলাম বা পেলাম না এটা জরুরি না। কারণ কত টাকা পেলাম তা বড় কথা নয়। বরং এক তৃতীয়াংশ ভূমি যদি পানির নিচে চলে যায়, তার জন্য কত টাকা প্রয়োজন সেটি বড় বিষয়। মিটিগেশন করে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন নি:স্বরণ কমাতে আমাদের জোর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যত টাকা আমাদের তার ৫০ ভাগ বন্যা আক্রান্ত মানুষগুলোর ঋণ খাপ খাইয়ে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এই জায়গায় জয়ী হতে পারলে একটা ফল আসবে। আরেকটা আশার জায়গায় এই প্রক্রিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাহরে বছরে একবার না দুইবার কিভাবে টাকা আসবে সেটা করা যাবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি আমাদের অবস্থান স্পষ্ট হওয়া উচিত। অনেক টাকা চাইনা, এর চেয়ে বরং যে সমস্যাটা আছে তার সমাধান চাই। বাংলাদেশর মতো দেশগুলো যারা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, তাদের অবস্থান এমন হওয়া উচিত। যেসব দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি কেন্দ্রিক যে উন্নয়ন করছে তা পরিবর্তন করতে হবে।

রিজওয়ানা বলেন, সরকার বর্তমানে জ্বালানি নীতিমালা পর্যালোচনা করছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক উৎপাদন থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উচ্চ আমদানি শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশে সৌরশক্তি প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণ আমাদের বড় পরিবেশগত সমস্যা। তাই এখনই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের সঠিক সময়।

তিনি বলেন, আর্টিকেল-৬ নিয়ে অনেক বিবাদ আছে। কার্বন আমাদের আর্টিকেল-৬ একটি অস্ত্র। উন্নত বিশ্ব যদি মনে করে যার যার দেশে কার্বন নিঃস্বরণ করবে তাহলে অনেক ক্ষতি হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের জলবায়ু বাস্তবতা এক রকম। তাই জলবায়ুর যে ভংগুরতা আছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা কমাতে পারি কি না সেটিও দেখতে হবে। কোন জায়গায় কমাতে হবে। এটার অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা এডাপটেশনে বেশি, নাকি মেডিকেশনে বেশি, না লস এন্ড ড্যামেজের কাজ বেশি করতে হবে। কাজ করার কী কী ক্ষেত্র আছে। -এসব দেখতে হবে।

তিনি বলেন, এটির প্রথম দুইটি মিটিং হয়েছে এবং দ্বিতীয় মিটিংটি বাংলাদেশে হবে জানুয়ারিতে।

উপদেষ্টা বলেন, মিটিগেশন নিয়ে জোরালো আলোচনা হচ্ছে। একটি হচ্ছে টেকনোলজিগুলোর কথা বলি আমরা। আমাদের দেশে দুর্যোগের সময় আমাদের যে পূর্ব সতর্কতা দরকার, তা যেন আমরা আগেই জানতে পারি। সেজন্য টেকনোলজির সহায়তা লাগবে। যে টেকনোলজি আমাদের দরকার, সেটির জন্য আমাদের সাহায্য প্রয়োজন আছে।

বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা দেশের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রায় ১০ শতাংশ (২১.০৪ মিলিয়ন টন সিও২-সমমান) এর জন্য দায়ী। শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন ৬ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার ৭৩ শতাংশ অপরিশোধিত অবস্থায় ল্যান্ডফিলে জমা হয়, ফলে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পুনঃউৎস আহরণ কেন্দ্র, ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্ল্যান্ট এবং স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপনে জাপানের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। চীনকে বাংলাদেশে সোলার ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট স্থানান্তরের অনুরোধ জানানো হয়েছে, যা আমদানি নির্ভরতা কমাবে। এছাড়া, সোলার প্যানেলের উপর কর কমানোসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আপডেটেড এনডিসি বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন, যার মধ্যে ৩২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ নিজস্ব উদ্যোগে অর্জন করবে। তবে, বাকি অংশ আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।বাংলাদেশ আগামী বছর এনডিসি ৩ দশমিক শূণ্য জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এদিকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক( জলবায়ু পরিপর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেমশন) মির্জা শওকত আলী জানিয়েছেন, গত ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কপ২৯ সম্মেলন আজ ২২ নভেম্বর শেষ হওয়া কথা থাকলেও বলা যাচ্ছে না। কারণ শুরু থেকে এবং পরে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা নিয়ে ফাইনাল টেক্সট এখনো বের হয়নি।