ঢাকাশনিবার , ১ মার্চ ২০২৫

বিশ্বের প্রাচীনতম নগরীগুলোর ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১, ২০২৫ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ । ৬ জন

বিশ্বের প্রাচীনতম নগরীগুলোর ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কিছু শহর আজও টিকে আছে, যা মানব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এসব শহর প্রাচীনকাল থেকেই বসবাসের উপযোগী ছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অধিকাংশ শহরের বিকাশে নদী বা নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কারণ তা পরিবহন, কৃষি ও বাণিজ্যের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল।

ভারত: বারাণসী (৩,০০০ বছর)

বারাণসী হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র শহর, যা গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও মণিকর্ণিকা ঘাটের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে এটি একটি পর্যটন ও ধর্মীয় কেন্দ্র। গঙ্গার তীরবর্তী হওয়ায় এটি প্রাচীনকালে বাণিজ্য ও কৃষির জন্য উপযুক্ত ছিল।

স্পেন: কাদিজ (৩,১০০ বছর)

ফিনিশীয়রা কাদিজ শহর প্রতিষ্ঠা করেছিল। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত, যা এটিকে গুরুত্বপূর্ণ নৌবাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছিল। বর্তমানে এটি স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও পর্যটনকেন্দ্র।

গ্রিস: থিবস (৩,৪০০ বছর)

থিবস প্রাচীন গ্রিসের একটি শক্তিশালী শহর ছিল এবং ট্রয় যুদ্ধের কিংবদন্তির সঙ্গে জড়িত। এটি সেফিসাস নদীর তীরে অবস্থিত, যা কৃষি ও পরিবহন ব্যবস্থায় সহায়তা করত। বর্তমানে এটি একটি ঐতিহাসিক শহর হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

সাইপ্রাস: লারনাকা (৩,৪০০ বছর)

লারনাকা ফিনিশীয় ও গ্রীক উপনিবেশ ছিল। এটি ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত, যা বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজ এটি সাইপ্রাসের একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র।

গ্রিস: এথেন্স (৩,৪০০ বছর)

এথেন্স বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহরগুলোর একটি, যা গণতন্ত্রের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত। এটি স্যারোনিক উপসাগরের কাছে অবস্থিত, যা নৌবাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমানে এটি গ্রিসের রাজধানী।

আফগানিস্তান: বালখ (৩,৫০০ বছর)

বালখ শহরকে ইসলামের আগমনের আগে ‘বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র’ বলা হতো। এটি একটি উর্বর নদী উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল, যা কৃষির জন্য উপযোগী ছিল। বর্তমানে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইরাক: কিরকুক (৪,২০০ বছর)

কিরকুক মেসোপটেমীয় সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। এটি ছোট নদী ও জলাশয় দ্বারা বেষ্টিত ছিল, যা কৃষি উৎপাদনের জন্য সহায়ক ছিল। বর্তমানে এটি ইরাকের অন্যতম তেলসমৃদ্ধ শহর।

ইরাক: আরবিল (৪,৩০০ বছর)

আরবিল ঐতিহাসিকভাবে অ্যাসিরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। এটি ছোট নদীগুলোর নিকটে অবস্থিত, যা কৃষি ও ব্যবসার জন্য সহায়ক ছিল। এটি আধুনিক কুর্দিস্তানের রাজধানী।

লেবানন: টায়ার (৪,৭৫০ বছর)

টায়ার প্রাচীন ফিনিশীয় সাম্রাজ্যের একটি প্রধান শহর ছিল। এটি ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত, যা এটিকে বাণিজ্যের কেন্দ্র বানিয়েছিল। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

জেরুজালেম (৪,৮০০ বছর)

জেরুজালেম ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মের জন্য পবিত্র শহর। এটি জর্ডান নদীর কাছে অবস্থিত, যা এটি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ। বর্তমানেও এটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।

লেবানন: বৈরুত (৫,০০০ বছর)

বৈরুত দীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। এটি ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত, যা এটিকে বাণিজ্য ও সামুদ্রিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র করেছিল। বর্তমানে এটি লেবাননের রাজধানী।

তুরস্ক: গাজিয়ানতেপ (৫,৬৫০ বছর)

গাজিয়ানতেপ প্রাচীন হিত্তি সভ্যতার অংশ ছিল। এটি ইউফ্রেটিস নদীর কাছাকাছি অবস্থিত, যা কৃষি ও বাণিজ্যের জন্য উপযোগী ছিল।

সিরিয়া: দামেস্ক (৬,৩০০ বছর)

দামেস্ক বিশ্বের প্রাচীনতম রাজধানীগুলোর একটি। এটি বারাদা নদীর তীরে অবস্থিত, যা এটিকে উর্বর করেছিল এবং কৃষির প্রসার ঘটায়। বর্তমানে এটি সিরিয়ার রাজধানী।

ফিলিস্তিন: জেরিকো (১১,০০০ বছর)

জেরিকো বিশ্বের প্রাচীনতম শহর হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি জর্ডান নদীর কাছাকাছি অবস্থিত, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনের অন্তর্ভুক্ত।

এই শহরগুলো শুধুমাত্র মানব সভ্যতার ইতিহাস বহন করে না, বরং বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের নীরব সাক্ষী। নদী বা নদীপথ এসব শহরের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কারণ তা পরিবহন, কৃষি ও বাণিজ্যের জন্য অপরিহার্য ছিল।