একটি গরম বিকেলে, একটি ছোট শহর বাইরনিহাট এর বাসিন্দারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নিমগ্ন ছিল। সেখানকার আকাশে মেঘের উপস্থিতি ছিল, তবে তাতে কোনো শান্তি ছিল না। যখনই কেউ বাইরে বের হতো, তাদের চোখে-মুখে এক অদ্ভুত ভারী অনুভূতি হত—এক ধরনের গাঢ় ধোঁয়া। তারা জানত, এই শহরের বাতাসের মান ঠিক নেই, কিন্তু কখনোই তারা বুঝতে পারেনি যে, এটি শুধু তাদের শহরের সমস্যা নয়, বরং পুরো বিশ্বের এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
২০২৪ সালের এক সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী শহরগুলোর দূষণের গতি পর্যালোচনা করা হয়। বাইরনিহাট মেঘালয়ের এই শহরটি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষিত শহরের তকমা পেয়েছে। গড় PM2.5 ঘনত্ব এখানে ১২৮.২ μg/m³ ছিল, যা পৃথিবীর অন্যান্য শহরের তুলনায় অনেক বেশি। আর এই উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ শহরের প্রতিটি মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসে প্রভাব ফেলছিল। এটি শুধু বাইরনিহাট এর কথা নয়, পুরো ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও বায়ুদূষণ ছিল ভয়াবহ—গড় PM2.5 ঘনত্ব ছিল ১০৮.৩ μg/m³।
তবে শুধু ভারতই নয়, বিশ্বব্যাপী কয়েকটি শহরের মধ্যে এভাবে দূষণের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে। কাজাখস্তানের করাগান্ডা শহর, যেখানে গড় PM2.5 ঘনত্ব ১০৪.৮ μg/m³ ছিল, তিন নম্বরে অবস্থান করছিল। পাকিস্তানের লাহোর শহরও সঙ্কটময় অবস্থায় ছিল—এর গড় PM2.5 ঘনত্ব ছিল ১০২.১ μg/m³। এই শহরগুলোর বাসিন্দারা যখনই বাইরে বের হতো, তাদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়ত, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষ বেড়ে যাচ্ছিল।
ভারতের ফারিদাবাদ শহরও এর বাইরে ছিল না, যেখানে গড় PM2.5 ঘনত্ব ছিল ১০১.২ μg/m³। ৯৩.০ μg/m³ গড় PM2.5 ঘনত্ব নিয়ে পাকিস্তানের দেরা ইসলামাবাদ খান শহরও তালিকায় ছিল। চাদে N’Djamena শহরও এই তালিকায় ছিল, যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ৯১.৮ μg/m³। ভারতের লোনি শহরের গড় PM2.5 ঘনত্ব ছিল ৯১.৭ μg/m³, এবং দিল্লির আরেকটি জায়গায় গড় PM2.5 ঘনত্ব ছিল ৯১.৬ μg/m³।
এখন, প্রশ্ন উঠছে—এই দূষণ কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে? বিশ্ববাসী যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে এগুলো শুধুমাত্র শহরের জন্য নয়, একটি বৈশ্বিক বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে। এসব শহরের মানুষদের জন্য পরিষ্কার বায়ু আর শ্বাসপ্রশ্বাসের মুক্তি চাওয়া যেন এক স্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। তবে, কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন বায়ু পরিশোধন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং শিল্প-কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা। তবুও, প্রকৃত সমাধান আসতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
এই দূষিত শহরগুলোর শ্বাসপ্রশ্বাসে ক্ষতিকারক উপাদানগুলোর প্রভাব দিন দিন ভয়াবহ হতে চলেছে। তবে, যদি আমরা সতর্ক না হই এবং একে একে পদক্ষেপ না নেব, তবে এই দূষণের হালচাল শুধু আমাদের ভবিষ্যত নয়, গোটা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।