ঢাকাসোমবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

বিশ্বের সেরা কিছু সিনেমা, যা একবার হলেও দেখা উচিত

রঞ্জন কুমার দে
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫ ১১:২২ পূর্বাহ্ণ । ৬৮ জন

রাত গভীর, চারপাশে নিস্তব্ধতা। এক কাপ কফি হাতে নিয়ে ল্যাম্পশেডের নরম আলোয় বসে আছেন আপনি, সামনে টেলিভিশনের পর্দা। আজ কি এমন একটি সিনেমা দেখা যায়, যা হৃদয়ে দাগ কেটে যাবে? এমনই কিছু চমৎকার চলচ্চিত্রের কথা বলব আজ, যেগুলো সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দর্শকদের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।

হলিউডের ক্লাসিক ও আধুনিক মাস্টারপিস

হলিউডের দুনিয়ায় বহু সিনেমা তৈরি হয়েছে, তবে কিছু সিনেমা কখনও পুরনো হয় না। ‘Forrest Gump’ (১৯৯৪) আমাদের শেখায় জীবন কীভাবে নানা মোড় নেয়, আর ‘Citizen Kane’ (১৯৪১) সাংবাদিকতার রহস্য ও ক্ষমতার কূটনীতি নিয়ে এক অবিস্মরণীয় গল্প। ‘Titanic’ (১৯৯৭) প্রেম ও বিপর্যয়ের এক অনন্য চিত্রায়ণ, আর ‘The Green Mile’ (১৯৯৯) মানুষের মানবিকতার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। আধুনিক যুগের ‘Joker’ (২০১৯) এক অনন্য মনস্তাত্ত্বিক সিনেমা যা সমাজের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরে। ‘Goodfellas’ (১৯৯০) অপরাধ জগতের বাস্তবতা তুলে ধরে, ‘Fight Club’ (১৯৯৯) পরিচিতির সংকট নিয়ে দারুণ একটি সিনেমা, এবং ‘Interstellar’ (২০১৪) মহাকাশ ও সময়ের রহস্য নিয়ে এক অনন্য কল্পবিজ্ঞান সিনেমা। ‘Saving Private Ryan’ (১৯৯৮) যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তুলেছে, আর ‘Casablanca’ (১৯৪২) প্রেম ও যুদ্ধে আত্মত্যাগের গল্প বলে।

ভারতীয় সিনেমার রত্ন

ভারতের চলচ্চিত্র জগত অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বহু ঐতিহাসিক সিনেমা তৈরি করেছে। ‘Sholay’ (১৯৭৫) বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এক অ্যাকশন-ড্রামা, যা বন্ধুত্ব ও প্রতিশোধের এক অসাধারণ গল্প। সত্যজিৎ রায়ের ‘Pather Panchali’ (১৯৫৫) গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য চিত্র, যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আধুনিক সময়ের ‘Gangs of Wasseypur’ (২০১২) ভারতীয় মাফিয়া কালচার ও বাস্তব জীবনের অপরাধের এক অবিস্মরণীয় প্রতিফলন। ‘Lagaan’ (২০০১) ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক অনুপ্রেরণামূলক লড়াইয়ের গল্প। ‘Mughal-e-Azam’ (১৯৬০) এক মহাকাব্যিক প্রেমের গল্প, যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। ‘Black’ (২০০৫) এক অবিশ্বাস্য মানবিক গল্প, যা দৃষ্টিহীন ও বধির এক মেয়ের সংগ্রামকে তুলে ধরে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গৌরব

বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ, এবং কিছু চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯) সত্যজিৎ রায়ের মাস্টারপিস হলেও এটি বাংলাদেশ ও ভারতের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘মাটির ময়না’ (২০০২) তানভীর মোকাম্মেলের এক অনবদ্য সৃষ্টি, যা সামাজিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। ‘আলতাবানু’ (২০১৮) আধুনিক নারীর সংগ্রামের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি। ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০) মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতার এক শক্তিশালী প্রতিচিত্র। ‘গেরিলা’ (২০১১) মুক্তিযুদ্ধের এক সাহসী নারীর জীবনকাহিনী। ‘মেঘলা আকাশ’ (২০০১) এক হৃদয়বিদারক প্রেম ও সামাজিক সংগ্রামের গল্প।

এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে সেরা কিছু সিনেমা

জাপানের ‘Seven Samurai’ (১৯৫৪) যুদ্ধ ও বীরত্বের কাহিনীকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, আর ‘Rashomon’ (১৯৫০) সত্যের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির এক অসাধারণ চিত্রণ। দক্ষিণ কোরিয়ার ‘Parasite’ (২০১৯) শ্রেণিবৈষম্য ও মানবিক মনস্তত্ত্বকে এক অনন্য রূপে ফুটিয়ে তুলেছে। চীনের ‘Crouching Tiger, Hidden Dragon’ (২০০০) মার্শাল আর্ট ও রূপকথার এক অসাধারণ মিশ্রণ। জার্মানির ‘Das Boot’ (১৯৮১) যুদ্ধের বাস্তবতা তুলে ধরে।

ইউরোপীয় ও অন্যান্য দেশের কিছু অবিস্মরণীয় সিনেমা

ফ্রান্সের ‘Amélie’ (২০০১) এক হাস্যরসাত্মক ও হৃদয়গ্রাহী গল্প, যা জীবনের ছোট ছোট সুখকে উপলব্ধি করায়। ফ্রান্সের আরেক বিখ্যাত সিনেমা ‘The Intouchables’ (২০১১) বন্ধুত্ব ও মানবিক সম্পর্ককে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। ফ্রান্সের ‘Breathless’ (১৯৬০) সিনেমার ইতিহাসে এক বিপ্লব এনেছিল। জার্মানির ‘Metropolis’ (১৯২৭) সাই-ফাই সিনেমার পথপ্রদর্শক। ইতালির ‘La Dolce Vita’ (১৯৬০) উচ্চবিত্ত সমাজের জটিলতা ও বিলাসবহুল জীবনের গল্প বলে, এবং ‘Cinema Paradiso’ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এক আবেগঘন উপহার। স্পেনের ‘The Others’ (২০০১) এক রোমাঞ্চকর হরর-থ্রিলার, যা দর্শকদের চমকে দিয়েছে।

সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, এটি সমাজের দর্পণ, ইতিহাসের নথি এবং মানুষের আবেগের প্রতিচিত্র। উপরের তালিকায় থাকা সিনেমাগুলো যদি না দেখে থাকেন, তবে সময় করে দেখে নিতে পারেন। হয়তো, আজ রাতেই আপনি আবিষ্কার করবেন এমন একটি সিনেমা, যা আপনার হৃদয়ে চিরস্থায়ী দাগ কেটে যাবে।