ঢাকারবিবার , ১৭ মার্চ ২০২৪

বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না পণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১৭, ২০২৪ ৯:০০ পূর্বাহ্ণ । ৮২ জন

পবিত্র রমজানে বাজারে স্বস্তি ফেরাতে মাছ-মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দর সরকার বেঁধে দিলেও নির্ধারিত দরে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো পণ্য নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ নিয়ে বাজার করতে আসা ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার লাগছে ঝগড়া-বিবাদ। গতকাল (১৬ মার্চ) শনিবার রাজধানীর কাওরানবাজার, শান্তিনগরবাজার ও তুরাগ এলাকার নতুনবাজারসহ কয়েকটি বাজারে সরকার নির্ধারিত দরে পণ্য বিক্রির বিষয়টি সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ করেন।

ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দর বেঁধে দিলেও বাজারে এ দরে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, যে দরে সরকার পণ্য মূল্য বেঁধে দিয়েছে, তাতে বিক্রি করলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।

কাওরানবাজারে মাংসব্যবসায়ী বরকত আলী জানালেন, ‘নির্ধারিত ৬৬৪ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব না’। তিনি বলেন, কীভাবে বিক্রি করব? যে দামে গরু কেনা হয়, তাতে এক কেজি গরুর মাংসের দামই এরচেয়ে বেশি পড়ে। বরকত আলী বলেন, দোকান ভাড়া আছে, কর্মচারীর মজুরি আছে, আরও অন্যান্য খরচ আছে। সব মিলিয়ে আমাদের তো পোষাতে হবে। তিনি ৭৩০ টাকা কেজির নিচে গরুর মাংস বিক্রি করতে পারবেন না বলে জানান। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ এই বাজারে গতকাল মাংস কিনতে আসা আসাদ রহমান।

তিনি বলেন, সরকার তো হিসেব করেই মাংসের দাম নির্ধারণ করেছে। তাহলে এখন নির্ধারিত দরে মাংস পাওয়া যাবে না কেন? খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীতে একেক বাজারে একেক দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। শ্যামবাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা মো. আলী আকবর জানান, তারা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭৮০ টাকায়। আবার কোনো কোনো বাজারে ৮০০ টাকা কেজিতেও গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গরুর মাংসসহ ২৯টি পণ্যের দর বেঁধে দিয়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা, ছাগলের মাংস ১ হাজার ৩ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা বিক্রির কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া, মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছ ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি পিস ডিমের দাম নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টাকা। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ছোলা ৯৮ টাকা, মসুর ডাল ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা, মোটা দানা মসুর ডাল ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, খেসারি ডাল ৯৩ টাকা, মাষকলাই ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা, মুগডাল ১৬৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, আদা ১৮০ টাকা, শুকনো মরিচ ৩২৭ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে। সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও শিম ৫০ টাকা, আলু সাড়ে ২৮ টাকা, টম্যাটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৪ টাকা দরে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলের মধ্যে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হালি সাগরকলা ৩০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকা ও বেসন ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দরে পণ্যগুলো বিক্রি হবে বলে জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে নির্ধারিত দরে যেন এসব পণ্য বিক্রি করা হয়, সেজন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে বাজার তদারকি করতে বলা হয়েছে। এদিকে বাজারে পাঙাশ ১৬০ টাকা ও কাতল মাছ ৩৫০ টাকায় আগে থেকেই বিক্রি হলেও এ দুটি পণ্যের দাম সরকার যথাক্রমে ১৮০ টাকা ও ৩৫৩ টাকা নির্ধারণ করেছে।

গতকাল বাজারে গরুর মাংসের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগিও নির্ধারিত দরে বিক্রি হতে দেখা যায়নি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এ প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের মা- রোকেয়া চিকেন ব্রয়লার হাউজের রাশেদ আলম বলেন, ‘সরকার ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির যে দর নির্ধারণ করেছে, সে দরে আমরা কিনতেও পারিনি। তাহলে বিক্রি করব কীভাবে?’ এ সময় এই দোকানে মুরগি কিনতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন চাকরিজীবী জানান, সরকার দর বেঁধে দিল, কিন্তু সেই দরে ভোক্তারা পণ্যটি কিনতে পারছে কি না, তা নিশ্চিত করছে না। তাহলে দর বেঁধে দিয়ে কী লাভ হলো?

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিন নিত্যপণ্যের খুচরা বাজারদর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। সংস্থাটির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৩০ থেকে ৭৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা, ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ছোটদানা মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, বড়দানা মসুর ডাল ১০৮ থেকে ১১২ টাকা, মুগ ডাল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, আদা ২০০ থেকে ২৮০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৮৫০ টাকা। আর ৪০ টাকা হালির নিচে কোনো কলাই নেই। টিসিবির প্রতিবেদনের তথ্যই বলছে, নির্ধারিত দরে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি না হলে পণ্যের দর নির্ধারণ করে দিয়ে মূল্য কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। তিনি বলেন, সরকারকে বাজার ব্যবস্থায় উন্নতি করতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। তাহলে বাজারে স্বস্তি ফিরবে।