ঢাকাশনিবার , ২৩ মার্চ ২০২৪
  • অন্যান্য

ভাঁট গাছের পরিবেশগত ভূমিকা

রতন মণ্ডল
মার্চ ২৩, ২০২৪ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ । ৪২১ জন

ভাঁট, ভাইট, বনজুঁই বা ঘেটু গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। Lamiaceae পরিবারভুক্ত এর বৈজ্ঞানিক নাম Clerondendron viscosum । এটি গ্রামবাংলার অতি পরিচিত একটি বুনো উদ্ভিদ। পল্লিবাংলার এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক এই ভাঁটফুল; জীবনানন্দের প্রিয় ফুল।

ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই। কিন্তু পরিবেশগতভাবে এর গুরুত্ব অতুলনীয় যা অনেকেরই অজানা। ভাঁট গাছের প্রধান কাণ্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান, সাধারণত ২-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। রাস্তার পাশে জন্মানো এদের ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা লোমশ অমৃন পাতা যানবাহনের ধূলা শোষণ করে বসন্তের বাতাস নির্মল করে দেয়। শুভ্র সাদা ফুলে প্রচুর মধু থাকে যা মৌমাছি প্রজাপতির খাবার যোগান দেয়। আবার পাকা ফল অনেক পাখির খাবারও। আর এদের ঝোপে শেয়াল, বেজি, গুইসাপ, ব্যাঙ, পিঁপড়াসহ অনেক প্রাণীর নিরাপদ অশ্রয়স্থল। শুধু কি তাই, রাতে মন্ত্রমুগ্ধ যে জোনাকিপোকা আলো জ্বালায়, সেসব জোনাকিপোকার প্রধান খাবার কিন্তু ভাঁট ফুলের পাতা। ফসলের ক্ষেতের আইলে বেড়া হিসাবেও বেশ কাজে দেয়। শুকনো গাছ গ্রামের মানুষের সহজ জ্বালানি হিসেবে বেশ পছন্দ।

আবর ঔষধি গুণেও পরিপূর্ণ এই উদ্ভিদ। এদের কচি পাতা মানুষের কৃমিনাশক হিসেবে বেশ কার্যকর। এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েড থাকার জন্য এটি ক্যান্সার দমনে সহায়ক। এছাড়াও চুলকানি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ও উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে এটি সাহায্য করে। কচিপাতার রস উকুন দূর করতেও কার্যকর। এছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীরা ভাঁট ফুল দিয়ে ভাঁটি পূজার আয়োজন করে থাকে।

ভাঁটফুল বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমার অঞ্চল এদের আদি নিবাস। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশেল আছে।

জীবনানন্দ দাশ এই ফুলকেই নিয়ে লিখেছিলেন–
‘বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের
মতো তার কেঁদেছিল পায়।’

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দ্বারভাঙা জেলার রমণী’ কবিতায়ও এই ফুলের কথা উল্লেখ আছে।

 

লেখক : কৃষিবিদ, কলাম লেখক ও ‘দেশীগাছ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আন্দোলন’ এর উদ্যোক্তা।