ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যশোরে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি ৮৫০০ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ । ২০ জন

টানা বৃষ্টিতে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের অভয়নগর উপজেলা অংশের ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২৬ গ্রামের ২ হাজার ২০০ পরিবারসহ আনুমানিক সাড়ে ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। আমন ধানসহ তলিয়ে গেছে কয়েকশ হেক্টর সবজি ও ফসলের খেত। এছাড়া স্কুলের মাঠ, বসতবাড়ির উঠান পানিতে থই থই করছে। কোথাও কোমর কোথাও বুক পর্যন্ত পানি জমেছে। ঘরের মধ্যেই ঢুকে পড়েছে পানি।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে অভয়নগরের প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া, পায়রা ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে ১ নম্বর প্রেমবাগ ইউনিয়নের জিয়াডাংগা (আংশিক), মাগুরা (আংশিক), বনগ্রাম (আংশিক), বালিয়াডাংগা (আংশিক) এই ৪টি গ্রামের আনুমানিক ২০০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২ নম্বর সুন্দলী ইউনিয়নের লক্ষীপুর, ডাংগা মশিয়াহাটি, ডহর মশিয়াহাটি, ভাটবিলা, ধোপাদী (আংশিক), সুন্দলী (আংশিক), এই ৬টি গ্রামের আনুমানিক ৫০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ নম্বর চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা, আন্ধা, বেদভিটা, কোটা (আংশিক), বলারাবাদ, চলিশিয়া (আংশিক), বাগদাহ (আংশিক), এই ৭টি গ্রামের আনুমানিক ৭০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪ নম্বর পায়রা ইউনিয়নের দিঘলিয়া (আংশিক), বারান্দী (আংশিক), আড়পাড়া (আংশিক) এই ৩টি গ্রামের আনুমানিক ২৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নওয়াপাড়া পৌরসভার বুইকারা (আংশিক), সরখোলা (আংশিক) আমডাংগা, লক্ষীপুর (আংশিক), ধোপাদী (আংশিক), গাজীপুর (আংশিক) এই ৬টি গ্রামের আনুমানিক ৫৭০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৫৫ জন শিশু আশ্রয় নিয়েছে।

সরেজমিনে ৪ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। বাড়ির উঠানেই কোমর পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসতে পারছেন না। গবাদিপশু ও মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে।

অভয়নগর উপজেলা ঘের মালিক সমিতির সভাপতি মো. রবিউল আলম বলেন, ঘেরগুলো ভেসে গিয়ে মালিকরা শেষ হয়ে গেছে। তাদের পুনর্বাসন দরকার। সরকারি সহায়তা না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরে ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১১৪ দশমিক ৫০ হেক্টর আয়তনের ৩৩২টি মাছের ঘের এবং ২৪ দশমিক ১৫ হেক্টর আয়তনের ১৮০টি পুকুর/দীঘি/খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য আমরা সব সময় প্রনোদনা বা সহায়তা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলে থাকি।

এবারও অনুরোধ করেছি বলে জানান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের ১ হাজার ৫৮১ হেক্টর, সবজির ১৩৬ হেক্টরসহ ১ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমির ফসল ও সবজির থেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, অভয়নগরের জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে যশোরের ডিসি সোমবার এসেছিলেন। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা অভয়নগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য গৃহীত সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাব।

এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছি বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের স্লুইস গেটে ৪টি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একপি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।