ঢাকাশনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য

যে সব শিশুর বার বার সংক্রমণ হয়

প্রফেসর ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লা
নভেম্বর ২৩, ২০২৪ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ । ১১২ জন

রোগ জীবাণুর সংক্রমণ নবজাতক থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য একটা বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বড়রা এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে যতটা মোকাবিলা করতে সক্ষম শিশুরা বিশেষ করে যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো কারণে নাজুক, তারা সেভাবে পারে না, অতি সহজেই রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হয় এবং তাদের জীবন হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মা-বাবাদের উচিত এ বিষয়ে সতর্ক থাকা।

কারা বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে?

১. এই তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে নবজাতক শিশুরা, বিশেষ করে যাদের জন্ম অপরিণত বয়সে এবং জন্ম ওজন কম।
২. যারা মারাত্মভাবে পুষ্টিহীন, যাদের শরীরে ভিটামিন এ ও ডি-এর ঘাটতি আছে।
৩. যারা জন্মের পর থেকে মায়ের দুধ এবং ছয় মাস বয়সের পর থেকে বাড়িতে তৈরি পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত, যাদের প্রতিটা দিন কাটে বাজার বা রাস্তা থেকে কেনা ত্রুটিপূর্ণ খাবার খেয়ে।
৪. যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জন্মগতভাবেই ত্রুটিপূর্ণ।
৫. যারা রক্তের ক্যানসার, হাম, এইডস, টাইপ-১ ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের দূর্বল বা ত্রুটিপূর্ণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রোগে ভুগছে।
৬. যে শিশুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, যেমন জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি, সেরিব্রাল পালসি, প্যারালাইসিসে ভুগছে।
৭. যাদের জন্মের পর থেকে প্রয়োজনীয় টিকাগুলো নেওয়া হয়নি।
৮. যারা দীর্ঘ মেয়াদে স্টেরয়েড বা কেমোথেরাপি পাচ্ছে।

কী করা উচিত?

১. বাসস্থানের সার্বিক পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের থাকার ঘর, খেলার জায়গা, টয়লেট, ঘরের মেঝে, তার ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খেলনা ভালোভাবে পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখতে হবে। বাইরের জুতা পরে শিশুর ঘরে ঢোকা যাবে না, শিশুর থাকার ঘরে অকারণে ভিড় করা যাবে না, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা যাবে না।

২. এসব শিশুর আশপাশে সেবাদানকারী ও মা-বাবা ছাড়া অন্যদের না যাওয়াই উচিত। পরিচর্যাকারীর মাস্ক পরা উচিৎ হবে।

৩. বাইরে থেকে এসে শিশুকে ধরার বা কোলে নেওয়ার আগে বাইরের কাপড় পরির্বতন করে, সাবান-পানি দিয়ে হাত কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

৪. ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর বিছানা, বালিশ, কাপড়, চাদর, খেলনা, প্লেট, গ্লাস – সবকিছুই আলাদা হবে এবং প্রতিদিন সেগুলো ধুয়ে-পরিষ্কার রাখতে হবে। কাপড়চোপড়গুলো ইস্তিরি করে রাখতে পারলে ভালো। শুধু তা-ই নয়, তাদের পরিচর্যাকারীদের পরনের কাপড়, হাত, নখ, চুল ইত্যাদির পরিচ্ছন্নতাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে।

৫. প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে হালকা গরম পানিতে শিশুকে গোসল বা শরীর পরিষ্কার করে দিতে হবে। গোসলের আগে কয়েক ফোঁটা অ্যান্টিসেপটিক মেশানো হালকা গরম পানিতে শিশুকে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখলে তার পায়ুপথ ও তার আশপাশ এলাকা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকবে।

৬. শিশুর খাবার পুষ্টিকর, প্রোটিনসমৃদ্ধ টাটকা, পরিচ্ছন্ন ও গরম হওয়া উচিত।

৭. পুরু খোসাসহ ফলমূল যেমন পাকা কলা, ডালিম, তরমুজ, কমলালেবু এসব শিশুর জন্য উপযোগী।

৮. খোসাবিহীন বা পাতলা খোসার ফলমুল যেমন- আঙুর, আপেল, আম ইত্যাদি না দেয়া উচিৎ হবে।

৯. শিশুর জ্বর হলে বা শরীরে কোথায়ও সংক্রমণের চিহ্ন দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসককে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

নোট: শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লার লিখিত ‘শিশু স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর অনুমতিক্রমে।