কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা দিতে সারাদেশে ১২শ-র বেশি অ্যাডোলোসেন্ট কর্নার বা কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র করেছে সরকার। প্রজনন স্বাস্থ্য পরামর্শ, মাসিক ব্যবস্থাপনা, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাউন্সেলিং এবং পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের গুরুত্ব বোঝানোই এসব কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা তথা বস্তিতে বসবাসকারী কিশোর-কিশোরীরা এ সেবা থেকে বঞ্চিত।
বস্তিতে থাকা স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক ধারণা পেলেও শিক্ষার বাইরে থাকা কিশোরীদের ভরসা এখনো মা, দাদি, বোন ও প্রতিবেশী। সঠিক জ্ঞান না থাকায় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য গুরুত্ব পাচ্ছে না কিশোরী ও অভিভাবকদের কাছে। হাতের নাগালে সরকারি কোনো কার্যক্রম না থাকায় সংকট আরো বাড়িয়েছে। ফলে বাল্যবিয়ে এবং ১৯ বছরের আগেই গর্ভধারণ সেখানে স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে বস্তিতে বসবাসকারী অধিকাংশ কিশোরীর ধারণা নেই। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বলছে, বস্তিতে বসবাসকারী কিশোর-কিশোরীদের ৪২ শতাংশের কাছে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাচ্ছে না। ৩০ শতাংশ কিশোরী জানে না তাদের মাসিক কখন শুরু হবে।
জানা গেছে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আরও ১৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, প্রজননস্বাস্থ্য, পুষ্টিসেবা, মাসিক ব্যবস্থাপনা ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করছে এসব বিভাগ। পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস সরকার, জাতিসংঘের উন্নয়ন তহবিল তথা ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশি বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে।
ঢাকার ঘন বসতিপূর্ণ ৩০টি ওয়ার্ডের ১০০টি এলাকায় রি-প্রোডাক্টিভ হেলথ নিয়ে কাজ করছে সিরাক- বাংলাদেশ। স্থানীয় সরকারের ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি প্রোগ্রামের’ (ইউপিএইচসিএসডিপি) অধীনে মোহাম্মদপুর, উত্তরা এবং উত্তর ও দক্ষিণখানের মতো ঘন বসতি এলাকগুলোতে ‘ইম্প্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা’ কর্মসূচি চালু রয়েছে সিরাকের।
২০২২ সালে প্রকাশিত আরবান হেলথ সার্ভের তথ্য বলছে, গ্রামে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি বলা হলেও অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের হার বস্তিতে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে গর্ভধারণের হার ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে বস্তিতেই ২২ দশমিক ১ শতাংশ। যা গ্রামাঞ্চলের ১০ দশমিক ৯ শতাংশের দ্বিগুণ। এ ছাড়া শহরাঞ্চলে এই হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ।
খবরের সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩