ঢাকারবিবার , ৩১ মার্চ ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাংবাদিক কর্মশালায় বক্তারা

রাজস্ব আয় বাড়াতে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ একান্ত জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ৩১, ২০২৪ ৪:২৬ অপরাহ্ণ । ১৯৯ জন

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্য কার্যকরভাবে বৃদ্ধির তামাকের ব্যবহার রোধ করার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি করা সম্ভব; যা ২০৪০ সালের আগেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয় বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

রাজধানীর পল্টনে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র-ডর্‌প এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত “আসন্ন ২০২৪-২৫ বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ ও মূল্য বৃদ্ধি” শীর্ষক এক সাংবাদিক কর্মশালায় গতকাল শনিবার (৩০ মার্চ ২০২৪) বক্তারা এই মতামত ব্যক্ত করেন। কর্মশালায় অর্থনীতি বিটে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার ২৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ হলে কেবল সিগারেট খাত থেকেই প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। এছাড়াও, প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, ১০ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১১ লক্ষ জনগোষ্ঠির তামাক ব্যবহারজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

কর্মশালায় আরো জানানো হয়, তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত পদ্ধতি কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান তামাক কর কাঠামো তামাক ব্যবহার কমাতে কার্যকর প্রভাব রাখতে পারছে না। অথচ শুধুমাত্র ২০১৭-১৮ অর্থবছরেই তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে এবং তামাকের নেতিবাচক প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার নিমিত্ত আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য কর্মশালাটিতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। যা নিম্নরূপ-

১। সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৩৭.৪০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৮০ টাকা নির্ধারণ করে ৫২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৮৪.৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে ১১০.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

২। ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

৩। জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০%) প্রচলন করা অর্থাৎ, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৩.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ১৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

সাংবাদিক কর্মশালাটিতে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন এবং বাজেটে তামাক কর কার্যকর হারে বৃদ্ধির যৌক্তিকতার ওপর আলোকপাত করেন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ দেশে ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকদের মধ্যে ধূমপানের হার ১৮ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তামাকপণ্য কর ও মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসাধারণের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে তরুণরা যাতে এটি গ্রহণ করতে না পারে।“

ডর্‌প এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করেন আব্দুল্লাহ নাদভী, গবেষণা পরিচালক, উন্নয়ন সমন্বয়। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, সহযোগী অধ্যাপক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা, সভাপতি, ইআরএফ। কর্মশালার প্রাক্কালে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডর্‌প নির্বাহী উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আজহার আলী তালুকদার এবং সমাপনী ঘোষণা করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন।

উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩.৪ এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্য অর্জনে এবং একইসাথে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম কার্যকর উপায় তামাকপণ্যে কর উচ্চহারে বৃদ্ধি।

ডর্‌প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্‌প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।