ঢাকাবুধবার , ১০ জুলাই ২০২৪
  • অন্যান্য

রাস্তায় ক্রিকেট খেলছেন আন্দোলনকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১০, ২০২৪ ২:৫০ অপরাহ্ণ । ৬৩ জন

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়ে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বন্ধ রয়েছে এই রুটের সকল যান চলাচল। এতে ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাস্তায় ক্রিকেট খেলায় মেতেছেন আন্দোলনকারী।

বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২ টায় হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের এই খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়।

এ সময় ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই সময়টায় পড়ার টেবিলে বা খেলার মাঠে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে কোটার এই সিস্টেমের জন্য আমাদের সড়কে এসে আন্দোলন করতে হচ্ছে। দেশের এই বৈষম্য বাতিল করার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। রাজপথে আমাদের এই ক্রিকেট খেলার জায়গা না কিন্তু আমরা এটাই বুঝাতে চাচ্ছি, এই আন্দোলনে যতদিন না ফল আসবে ততদিন চালিয়ে যাবো।’

‘রায়ে যেহেতু স্থিতিতাবস্থা দেয়া হয়েছে, আমাদের দাবি যেহেতু মেনে নেয়া হয়নি সেহেতু আমরাও রাজপথ ছাড়বো না। তাই এই সময়টা কাজে লাগাতে ক্রিকেট খেলছি।’ বলেন আরেক শিক্ষার্থী সোহাগ।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই। যতদিন পর্যন্ত কোটা পদ্ধতির সংস্কার হচ্ছে না ততদিন আন্দোলন চলবে। আমরা প্রতিবাদ স্বরূপ রাস্তায় ক্রিকেট খেলবো।’

এর আগে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেন আদালত। আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

তবে আদালতের এই আদেশে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারীরা। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আসার পর রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রতিক্রিয়া জানান। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।

আদালতের আদেশের পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, কমিশন গঠন করে কোটা পদ্ধতির সংস্কার ও স্থায়ী সমাধান হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

তারা বলেন, ‌‘হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আমরা ২০২৪ সালে এসে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় নয়, সকল চাকরি থেকে কোটা তুলে নেয়ার এক দফা দাবি আমাদের। আমাদের দাবি হাইকোর্টের কাছে নয়, সংসদের কাছে। সংসদে আইন পাশ করে সকল চাকরি থেকে কোটা তুলে নিতে হবে। আইন অনুসারে ৫ শতাংশ কোটা রেখে সব তুলে নিতে হবে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। স্থায়ী সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না, আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। পরে ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে রিট করেন। গত ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা ব্যবস্থা।

এরপর গত ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় শনিবার রাজধানীর শাহবাগ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী রোববার ও সোমবার টানা দুদিন বিকেলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ এলাকা থেকে এ কর্মসূচি পালন করেন।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, সারাদেশের সব মহাসড়ক ও রেলপথ এ ব্লকেডের আওতাভুক্ত থাকবে।

এর আগে ব্লকেড কর্মসূচিতে কয়েকঘণ্টা সড়ক অবরোধ করলেও বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। এদিনই আবার কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি হয়। শুনানির পর সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। চার সপ্তাহ পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে।