করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সবাই বাড়িতে থাকছেন। এসময় সন্তানদের সঙ্গে গল্প করুন, মজা করুন, ধর্মের বিধানে জীবনাচারের কথা বলুন, ইত্যাদি। তাদের নানা কাজে ব্যস্ত রাখুন, পরিচ্ছন্নতা শেখান। তবে ঘরে আবদ্ধ শিশুদের কিছু ছোটখাটো সমস্যাতো হরহামেশাই হয়। এ ধরনের সমস্যা ও অসুস্থতায় বাড়িতে থাকাই ভালো। ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজ না হলে টেলিফোন বা টেলিমেডিসিনের পরামর্শ নিন। খুব জরুরি না হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে যাবেন না।
১. নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া
স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে বা নরমাল স্যালাইনে এক টুকরো তুলা ভিজিয়ে দৈনিক কয়েকবার নাক দুটো পরিষ্কার করে দিন। এতে সমাধান না হলে জাইলোমেটাজলিন (০.০২৫%) নাকের ড্রপ ১ ফোঁটা করে প্রতি নাকে দিলে দ্রুত নাক খুলে যাবে। তবে এটা বার বার ব্যবহার না করাই ভালো। নাক দিয়ে পানি পড়লে বার বার পরিষ্কার করে দিন। এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খুব জরুরি না হলে না দেয়াই ভাল।
২. পাতলা পায়খানা
বাড়িতে খাওয়ার স্যালাইন রাখুন। পাতলা পায়খানা হলে প্রতিবার পায়খানার পর সঠিকভাবে তৈরী স্যালাইন খাওয়াবেন। পুরো ১ প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলে নিন। ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিবার স্যালাইনের পরিমাণ হবে ৮ থেকে ১০ চামচ, ১ বছরের বেশি শিশুদের দিতে হবে ১০ থেকে ২০ চামচ। বুকের দুধ এবং বাড়িতে তৈরি খাবার আগের মতোই দেবেন। কেনা খাবার, টিনের খাবার, বাসি খাবার, বোতলে করে কোনো খাবার দেবেন না। খেয়াল রাখবেন, শিশুর প্রাণচাঞ্চল্য কেমন এবং নিয়মিত ভাবে প্রস্রাব হচ্ছে কি না। যদি প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, শিশু দুর্বল কিংবা চঞ্চলতা হারায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. বমি
কোনো কারণে বার বার বমি হলে ডমপেরিডোন সাপোজিটরি (১৫ মি. গ্রা.) অর্ধেক বা একটা পায়ুপথে দিন। অনেক সময় ডমপেরিডোনে বমি বন্ধ না হলে সিরাপ ‘এমিস্টাট’ ১/২ চামচ করে দৈনিক ২ বার ১ দিন দেয়া যাবে। এরপরও যদি বমি বন্ধ না হয়, প্রস্রাব বা চাঞ্চল্য কমে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ সময়ে অন্যদিনের ন্যায় শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর দরকার নেই।
৪. অবিরাম কান্না
অনেক ছোট শিশু কখনও কখনও এমন অবিরাম কান্না করতে থাকে যে তা রীতিমত ভয় পাইয়ে দেয়। এ অবস্থায় তার মাথার দিকটা খাড়া করে কোলে নিয়ে হাঁটুন, ঘরের ভেতরে বন্ধ পরিবেশে থাকলে বারান্দায় নিয়ে আসুন। পায়খানা করেছে কি না, পেট ফাঁপা কি না কিংবা পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে কি না খেয়াল করুন। কান দেখুন, পুঁজ কিংবা সংক্রমণ আছে কি না। ছেলে শিশু হলে তার অন্ডকোষ ২টি চেক করুন। কান্না না থামলে সিমেথিকন/ফ্লাকল ড্রপ ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা খাইয়ে অপেক্ষা করুন। বার বার লক্ষ্য করুন। প্রতিকার না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৫. পায়খানা না হওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে শিশুরা পেট ব্যথায় কষ্ট পায়। দু-তিন দিন ধরে মলত্যাগ না করলে গ্লিসারিন সাপোজিটরি (ছোটদের সাইজ) একটা পায়ুপথে ঢুকিয়ে ধরে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পর ১ থেকে ২ চামচ পানি বা শরবত খাওয়ান। মাংস, ভাজাপোড়া খাবার কমিয়ে সবজি-ফলমূল, পাতলা ডাল দিতে চেষ্টা করুন।
৬. শরীরে র্যাশ, চুলকানি
গরমে অনেক শিশুর ত্বকে র্যাশ ও চুলকানি হয়। কুসুম গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দিন। এতে না কমলে সিরাপ হাইড্রক্সিজিন (আরটিকা) আধা চামচ করে দৈনিক দু’বার খেতে দিন। ২ থেকে ৩ দিন এভাবে খাওয়ান। র্যাশ ও চুলকানি বেড়ে গেলে ডাক্তারের কাছে ফোন দিন।
৭. কাশি হলে
হালকা গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস, অল্প চিনি আর কয়েকটা চায়ের পাতা মিশিয়ে ১/২ চামচ করে শিশুকে খাওয়ান। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলালেবুর রস দিলে ভালো। তবে কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট হলে প্রাথমিক অবস্থায় নেবুলাইজার দেয়া যায়, যদি বাসায় থাকে।
৮. জ্বর
এ সময় শিশুদের জ্বরও হচ্ছে। জ্বর হলে হালকা গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে মাথাসহ পুরো শরীর মুছে দিন। প্যারাসিটামল সিরাপ বা ড্রপ (৪ থেকে ৮ মাস বা তার কম বয়সী হলে ১ মিলি, ৯ থেকে ১২ মাস হলে ১.৫ মিলি, ১ থেকে ৩ বছর বয়সীদের দেড় চামচ) খাইয়ে দিন। বেশি বেশি পানি, শরবত, ডাবের পানি, খাওয়ার স্যালাইন ইত্যাদি দিন। যাদের আগে জ্বরের সাথে খিঁচুনী হবার ইতিহাস আছে, তার জ্বর আসলে জ্বরের সঙ্গে খিচুনি হতে পারে, তাই তাদের প্যারাসিটামলের পাশা-পাশি ট্যাবলেট ডায়াজিপাম (৫ মিলিগ্রাম) অর্ধেক করে বড়ি দৈনিক ২ থেকে ৩ বার খাইয়ে দেবেন এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
নোট: শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লার লিখিত ‘শিশু স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর অনুমতিক্রমে।