তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে গড়ে ৪৪২ জন মানুষ। এই মৃত্যু রোধ করতে হলে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া অতি দ্রুত পাস করতে হবে। আইনের সংশোধন যত বিলম্ব হবে, এই মৃত্যু ততই বাড়তে থাকবে, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী’র তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনও বাধাগ্রস্থ হবে।
আজ সোমবার ( ৩১ জুলাই ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাসের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত খসড়াতে ধুমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, খুচরা বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ ও সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তা ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে যা আইনটিকে আরো কঠোর করবে। ফলে তামাকজনিত মৃত্যু কমবে, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ত্বরাণ্বিত হবে। এজন্য সম্মেলনে বক্তারা সংশোধিত আইনের দ্রুত পাসের জন্য জোরালো দাবি তোলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, এমপি বলেন, প্রায় তিন কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। এ মানুষগুলো জানেনও না যে তারা ধূমপান না করেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ সমাজ ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ভারতসহ বিশ্বের ৪২টি দেশ এটা নিষিদ্ধ করেছে। লক্ষ্যেই আইনটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি আইনটি দ্রুত পাস হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে মাইলফলক হিসাবে কাজ করবে বলে মনে করি। আইনটি সংসদে যেন দ্রুত পাস হয় সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নেবো।
সংসদ সদস্য শিরীন আহমেদ বলেন, ই-সিগারেট ও বিড়ি-সিগারেটের খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আইনটি যথা দ্রুত পাস হোক এটাই আমার চাওয়া।
বরেণ্য সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এ আইনটি দ্রুত পাসের মাধ্যমে শক্তিশালী করা গেলে একদিকে অধূমপায়ীরা পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা পাবেন। অন্যদিকে আগামী প্রজন্মের নাগরিকদের তামাক পণ্য ব্যবহারের সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পক্ষান্তরে তামাকজনিত কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জনের মৃত্যু রোধ করা সম্ভবপর হবে। পাশাপাশি, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বর্তমানে কোন পর্যায়ে আমরা আছি, তা সবার নজরে আনার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মী ছাড়াও অন্যানদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)’র প্রোগ্রামস ম্যানেজার মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া, কমিউনিকেশন ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানাসহ তামাক বিরোধী সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ।