ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস: শীর্ষ ১০ দেশের বিশ্লেষণ এবং বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

রঞ্জন কুমার দে
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ । ৬০ জন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। ২০২৫ সালের এডেলম্যান ট্রাস্ট বারোমিটার অনুসারে, কিছু দেশ রয়েছে যেখানে জনগণের আস্থা সরকারে অত্যন্ত উচ্চ। এই শীর্ষ ১০ দেশগুলি কীভাবে সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেন আলাদা, সেই বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

১. সৌদি আরব (৮৭%)
সৌদি আরবের সরকার একদলীয় এবং রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়। দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক শৃঙ্খলা এবং রাজ পরিবারের প্রতিশ্রুতি জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশেষ করে তেলের রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের সঠিক ব্যবহার, জনগণকে সরকারের প্রতি আস্থাশীল করেছে।

২. চীন (৮৩%)
চীন, একদলীয় কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের কার্যকরী নীতির কারণে জনগণের মধ্যে আস্থা অর্জন করেছে। দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়ন চীনকে বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছে, যা জনগণের আস্থাকে দৃঢ় করেছে।

৩. যুক্ত আরব আমিরাত (৮২%)
যুক্ত আরব আমিরাত একটি রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অনুসরণ করে এবং তার শাসক পরিবারের ধারাবাহিকতা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করেছে। দ্রুত উন্নয়ন, সমৃদ্ধির সূচনা, এবং নাগরিকদের জন্য সরকারী কল্যাণ কর্মসূচি UAE-তে জনগণের আস্থাকে দৃঢ় করেছে।

৪. ভারত (৭৯%)
ভারত একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে জনগণের আস্থা ৭৯%। দেশের রাজনীতি যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলেও, সরকার সাধারণ জনগণের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পে গুরুত্ব দেয়, যার ফলে জনগণের আস্থা বজায় থাকে।

৫. সিঙ্গাপুর (৭৭%)
সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ৭৭%। সরকারের কার্যকরী নীতি, স্বচ্ছতা এবং সামাজিক কল্যাণে সিঙ্গাপুরের সাফল্য জনগণের আস্থার মূল কারণ। দেশের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত শহরের মধ্যে অন্যতম হওয়ায় সরকারকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।

৬. ইন্দোনেশিয়া (৭৫%)
ইন্দোনেশিয়ার সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ৭৫%। দেশটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শাসন ব্যবস্থা, যদিও কম শক্তিশালী, তবে জনগণের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।

৭. মালয়েশিয়া (৬৭%)
মালয়েশিয়া, একটি মধ্যম আয়ের দেশ, যেখানে সরকারের প্রতি আস্থা ৬৭%। দেশটির শাসন ব্যবস্থা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলির কার্যকারিতা জনগণের আস্থা নিশ্চিত করেছে, যদিও মাঝে মাঝে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আস্থার বিরুদ্ধে কাজ করেছে।

৮. থাইল্যান্ড (৬৩%)
থাইল্যান্ডে সরকারে আস্থা ৬৩%। সামরিক শাসন এবং গণতান্ত্রিক শাসনের মধ্যকার পরিবর্তনগুলির মধ্যে জনগণের আস্থা কিছুটা কমেছে, তবে সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির মাধ্যমে আস্থা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।

৯. নেদারল্যান্ডস (৫৮%)
নেদারল্যান্ডসের জনগণের আস্থা ৫৮%। এটি একটি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে সরকারি নীতি এবং প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। জনগণের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে একটি উচ্চমানের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা সরকারের প্রতি আস্থার মূল ভিত্তি।

১০. সুইডেন (৫৪%)
সুইডেনের জনগণের আস্থা ৫৪%। এটি একটি উন্নত রাষ্ট্র, তবে সাম্প্রতিক কিছু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আস্থা কিছুটা কমেছে। তবুও, সুইডেনের শক্তিশালী সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা এবং সরকারের কার্যকরী নীতি জনগণের আস্থা নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশের অবস্থান এবং উত্তরণের জন্য করণীয়

বাংলাদেশে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা অন্যান্য শীর্ষ ১০ দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসের অভাব। অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় বাংলাদেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যা জনগণের আস্থার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১. রাজনৈতিক অস্থিরতা: বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্ব এবং প্রশাসনিক ত্রুটির কারণে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকলে জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না।

২. দুর্নীতি: দুর্নীতির সমস্যা বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, যা জনগণের আস্থায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত জনগণের বিশ্বাস ফিরে আসবে না।

৩. অর্থনৈতিক সংকট: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাকে কমিয়ে দেয়।

তবে, সরকারের জন্য উত্তরণের কিছু পথ রয়েছে:

১. দুর্নীতি দূরীকরণ: সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনার জন্য সকল পক্ষকে সংলাপে নিয়ে আসা।
৩. জনকল্যাণমূলক প্রকল্প: উন্নয়ন প্রকল্প এবং নাগরিক সেবা আরও কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য করে তোলা।
৪. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা: নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করা।

তবে, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে সরকার তার প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হতে পারে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।