ঢাকাশুক্রবার , ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

শুল্ক-কর বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া

সিগারেটের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১০, ২০২৫ ৪:১২ অপরাহ্ণ । ২২ জন

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। তবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিগারেটের চার স্তরেই মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত ইতিবাচক ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। আজ শুক্রবার দুপুরে (১০ জানুয়ারি ২০২৫) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা একথা জানায়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে এ–সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে। নতুন জারি করা এ অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।

বিএনটিটিপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন থেকে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার মুদ্রাস্ফিতি অনুযায়ী বৃদ্ধি করার দাবি জানালেও তা মানা হয়নি। ফলে দেশে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি অনুভব করে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যে হারে সব স্তরের সিগারেটের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি করেছে তা কিছুটা হলেও মুদ্রাস্ফিতিকে আমলে নেয়া হয়েছে। এতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক ও কার্যকর অবদান রাখবে।

নতুন অধ্যাদেশে নিম্ন স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ১০ টাকা বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ স্তরের কর হার ৬০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কারণ দেশে মোট সিগারেটের ৭০ শতাংশের বেশি ভোক্তা নিম্ন স্তরের সিগারেটের। এছাড়া মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার সিগারেট ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ৮০ টাকা, উচ্চ স্তরে ২০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৪০ টাকা এবং অতিউচ্চ স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার মূল্য ২৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৮৫ টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই তিন স্তরের কর হার ৬৫.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, অধ্যাদেশে মুদ্রাস্ফিতি ও মানুষের ক্রয় সামর্থ বৃদ্ধি কিছুটা বিবেচনায় নিলেও সিগারেটের এ মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়, তবুও এটা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে তামাক কোম্পনির অযাচিত মুনাফা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরবে। তবে এই সুযোগে দেশের দুটি কোম্পানি সিগারেট মজুদ করে চোরাচালানের মিথ প্রচার করতে পারে এবং তারা নকল সিগারেট বাজারজাত করে কর ফাঁকি দিতে পারে। এজন্য নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যান্ডরোলে কিউআর কোড যুক্ত করে কর আদায় ব্যবস্থা আরও ডিজিটালাইজ করতে হবে।

বিড়ি ও ধোঁয়হীন তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শতাধিক পণ্যের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি করা হলেও বিড়ি ও ধোঁয়াহীন তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যা অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ এগুলোর ভোক্তা অনেক বেশি এবং স্বাস্থ্য ক্ষতিও বেশি। তবে সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্য ও কর বৃদ্ধি করলেই হবে না, সরকারকে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেটের বিক্রি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবনা থেকে তদুর্ধ্ব শব্দ বাতিল করতে হবে। কারণ এগুলো কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি ও রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

সিগারেটের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধিতে নতুন অধ্যাদেশের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনটিটিপির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, সিগারেটের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে ত্রুটিপূর্ণ অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখতো। পাশাপশি তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমতো। তবে তামাক কোম্পানি যাতে নকল সিগারেটের মাধ্যমে কর ফাকি দিতে না পারে এজন্য পাইকারি, খুচরা বিক্রয়কারী ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও বিক্রয়কেন্দ্রগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারে কর কমাতে হবে।