ঢাকাসোমবার , ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

স্পাইনা বিফিডা ও হাইড্রোসেফালাস : নজরের বাইরে থাকা মরণঘাতী রোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২৮, ২০২৪ ৬:০৫ অপরাহ্ণ । ৫১ জন

স্পাইনা বিফিডা ও হাইড্রোসেফালাস একটি মরণঘাতী রোগ। কিন্তু এ নিয়ে তেমন সচেতনতা নেই। স্পাইনা বিফিডা, হাইড্রোসেফালাস ও নিউরাল টিউব ত্রুটিসহ জন্মগত ত্রুটি এবং তা প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এই রোগের অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যে ফোলেট ঘাটতি। এই ঘাটতির কারণে গর্ভকালীন সময়ে ভ্রূণ থেকেই সমস্যার সূত্রপাত হয়, ফলত মৃতশিশু জন্ম বা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশুর জন্ম হয় এবং বেঁচে থাকলে সারাজীবন তাদের নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা জর্জরিত অত্যন্ত বিপন্ন অবস্থায় কাটাতে হয়।

আজ সোমবার (২৮ অক্টোবর ২০২৪) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিশ্ব স্পাইনা বিফিডা ও হাইড্রোসেফালাস দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে এক মত বিনিময় সভায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুদীপ্ত কুমার মুখার্জী এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

কানিজ মওলা, অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ), স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় দিবসটির তাৎপর্য এবং স্পাইনা বিফিডা ও হাইড্রোসেফালাস প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। সভা আয়োজনে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)।

ডা. সুদীপ্ত কুমার মুখার্জী বলেন, ছিয়াত্তরতম ওয়ার্ল্ড হেলথ এসেম্বলি (ডব্লিউএইচএ)-এর তথ্যমতে প্রজনন বয়সসীমার নারীদের মধ্যে ৪০% এরও বেশি নারী ফোলেটের অপ্রতুলতায় ভোগে। জন্মগত ত্রুটির কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে আনুমানিক ২,৪০,০০০ নবজাতক মারা যায়। একটি বড় জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া ১০টি শিশুর মধ্যে নয়টিই জন্ম নেয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে৷ বাংলাদেশে ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভে ২০১১-১২ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফোলেটের ঘাটতি ৯.১০% যা ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভে ২০১৯-২০ এর পরিসংখ্যানে ২৯% এ উপনীত হয়েছে। এই সার্ভেতে দেখা যায় যে, প্রতি সাতজন নন-প্রেগনেন্ট নন-ল্যাকটেটিং নারীর মধ্যে দুইজনই ফোলেট ঘাটতিতে ভুগছে। ফলে স্পাইনা বিফিডা, হাইড্রোসেফালাস এবং অন্যান্য নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (এনটিডি) আক্রান্ত শিশু জন্মের ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সভাপতিত্বের বক্তব্যে কানিজ মওলা বলেন, খাদ্যে অনুপুষ্টির ঘাটতি নীরব ঘাতক হিসেবে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ৭৬ তম ওয়ার্ল্ড হেলথ এসেম্বলিতে “নিরাপদ এবং কার্যকর খাদ্য সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি প্রতিরোধ এবং ঘাটতিজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- স্পাইনা বিফিডা এবং অন্যান্য নিউরাল টিউব ত্রুটি নিরসন” বিষয়ে গৃহীত রেজোলিউশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমাদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বাংলাদেশে লবণে আয়োডিন এবং ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ ফর্টিফিকেশনের সাফল্যে কথা তুলে ধরে বলেন, আটা-ময়দা এবং যথোপোযুক্ত প্রধান খাদ্যে ফোলেট ফর্টিফিকেশন অনুপুষ্টির ঘাটতি নিরসনে সাফল্যের ধারাকে অব্যহত রাখতে সক্ষম।

উপস্থিত বক্তারা মতবিনিময়ের সময় বলেন, স্পাইনা বিফিডা, হাইড্রোসেফালাস ও নিউরাল টিউব ত্রুটিসহ জন্মগত ত্রুটি নিরসনে দরকার সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত। এটিকে বিশেষ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আমলে নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, ইরান ইত্যাদিসহ বিশ্বের ৮৬টি দেশে ফোলেট ঘাটতি নিরসনে আটা-ময়দায় ফোলেট ফর্টিফিকেশন করা হয়েছে এবং বেশ সফলভাবেই ফোলেট ঘাটতিজনিত স্বাস্থ্য সংকট কাটিয়ে উঠেছে। এইসব সফল কার্যক্রমসমূহের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বাংলাদেশেও এই স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসনে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। এছাড়া জনগণের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা থেকে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো দরকার।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী, যুগ্ম-সচিব (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা), স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; জনাব আনোয়ার হোসেন আকন্দ, যুগ্ম-সচিব (মানব সম্পদ ও জনস্বাস্থ্য ২), স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ; অধ্যাপক জয়নুল ইসলাম, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, নিউরোসার্জারি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল; মো. আব্দুসা সালাম, পরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর; অধ্যাপক সারোয়ার ইবনে সালাম, বিভাগীয় প্রধান, পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুণর্বাসন কেন্দ্র; অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, সাবেক সভাপতি, The Obstetrical and Gynaecological Society of Bangladesh (OGSB); ড. রুদাবা খন্দকার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)। এছাড়াও, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ নিরাপাদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর প্রতিনিধিবৃন্দ, স্ত্রী ও প্রসূতী বিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং ‍পেডিয়াট্রিক নিউরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ; ইফাদ মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লি. এবং মেঘনা গ্রুপ; সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গেইন বাংলাদেশের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।